ম্যাক্স ওয়েবারের মতে কর্তৃত্ব
আইনের বৈধতার নীতিসমূহ বর্ণনাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ম্যাক্স ওয়েবারের কর্তৃত্ব সম্পর্কিত তত্ত্ব। ঐসব নীতির সাধারণ কাঠামো ও প্রধান প্রধান প্রকার ওয়েবার আলোচনা করেছেন। আইনসিদ্ধ ক্ষমতাকে কর্তৃত্ব বলে। আদেশ প্রদানের ক্ষমতা আইনসিদ্ধ হলে কর্তৃত্বের উদ্ভব হয়।
কর্তৃত্বের স্বরূপ আলোচনা করতে গিয়ে ম্যাক্স ওয়েবার কর্তৃত্বকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা-
(১) ঐতিহ্য পরম্পরা কর্তৃত্ব (Traditional authority),
(২) বৈধ যুক্তিসিদ্ধ কর্তৃত্ব (Legel-rational authority) এবং
(৩) সম্মোহনী কর্তৃত্ব (Charismatic authority)।
নিচে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
১. ঐতিহ্য পরম্পরা কর্তৃত্ব (Traditional authority): আবহমানকাল ধরে চলে আসা কোন বিশেষ আদেশ মান্য করা প্রথাগতভাবে বাধ্যতামূলক। এ ধারণার ভিত্তিতে লোকে যখন কোন উর্ধ্বতন ব্যক্তির আদেশ মেনে চলে তখন তাকে ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব (Traditional authority) বলে। ইতিহাসের মধ্যযুগের সমাজব্যবস্থায় এরকম ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব বর্তমান দেখা যায়। ঐতিহ্য পরম্পরাগত কর্তৃত্ব কতকটা ধর্মীয় কর্তৃত্বও বটে।
২. বৈধ যুক্তিসিদ্ধ কর্তৃত্ব (Legal-rational authority): নিয়মও আইনসিদ্ধ এবং তাই যুক্তিনির্ভর। এ ধারণার ভিত্তিতে লোকে যখন আদেশ পালন করে থাকে, তাকে যুক্তিনির্ভর ও আইনসিদ্ধ কর্তৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে আদেশ নির্দেশ কোন ব্যক্তিবিশেষের নামে জারি করা হয় না। আদেশ- নির্দেশ জারি করা হয় পদের নামে নৈর্ব্যক্তিকভাবে।
৩. সম্মোহনী কর্তৃত্ব (Charismatic authority): সম্মোহনী কর্তৃত্ব ব্যক্তির দুর্লভ প্রতিভা, মেধাশক্তি, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের গুণাবলি দ্বারা অর্জিত হয়। এটি বিধাতা প্রদত্ত বলে প্রচলিত ধারণায় মেনে নেয়া হয়। সততা, সৎসাহস, বাকশক্তি ইত্যাদি দ্বারা সম্মোহনী কর্তৃত্ব লাভ করা যায়।
কর্তৃত্ব সংক্রান্ত ম্যাক্স ওয়েবারের ধারণা আধুনিক সমাজতত্ত্বের আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেছে, তবুও অনেকে এর সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন:
ম্যাক্স ওয়েবার: তত্ত্ব, পরিচয় ও বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহ
ম্যাক্স ওয়েবারের সামাজিক ক্রিয়া তত্ত্ব আলোচনা কর