যোগান বিধির ব্যতিক্রম
যে বিধির মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের দামের সাথে তার যোগানের সম্পর্ক প্রকাশ পায়, তাকে যোগান বিধি বলা হয়। যোগান বিধিতে বলা হয়, বেশি দামে যোগান বেশি হয় এবং কম দামে যোগান কম হয়। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে যোগান বিধির ব্যতিক্রম দেখা যায়।
যোগান বিধির ব্যতিক্রম গুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১. সীমাবদ্ধ যোগান
যেসব দ্রব্যের যোগান সীমাবদ্ধ সেসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও যোগান বৃদ্ধি সম্ভব হয় না। যেমন ভূমির যোগান সীমাবদ্ধ। ভূমির ক্ষেত্রে যোগান রেখার আকৃতি লম্ব অক্ষের সমান্তরাল হয়।
২. প্রান্তিক উৎপাদন ব্যয়
উৎপাদনের নতুন কলাকৌশল আবিষ্কার, বৃহদায়তন উৎপাদনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ মিত ব্যয় লাভ ইত্যাদি কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনের প্রান্তিক ব্যয় কমে যেতে পারে। এরূপ অবস্থায় কম দামে যোগান বেশি হতে পারে।
যোগান কাকে বলে? যোগান বিধি কি? – সংজ্ঞা ও উদাহরণসহ আলোচনা |
৩. শ্রমের যোগান
কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি পেলে যোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি না পেয়ে বরং হ্রাস পায়। শ্রমের যোগানের ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম দেখা যায়। মজুরি বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় শ্রমিকরা কম কাজ করে এবং বেশি বিশ্রাম ভোগ করে। অর্থাৎ বেশি মজুরিতে শ্রমের যোগান হ্রাস পায়।
৪. দুষ্প্রাপ্য বস্তুর ক্ষেত্রে
কোনো কোনো বস্তুর পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং এর দাম যাই হোক না কেন যোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। যেমন কোনো মৃত শিল্পীর অঙ্কিত দুষ্প্রাপ্য ছবি। এ ছবির মূল্য বৃদ্ধি পেলে কিংবা হ্রাস পেলে যোগান একই পরিমাণ থাকে।
৫. বিক্রেতার ধারণা
কোনো সময় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে বিক্রেতা যদি মনে করে যে, দাম আরও বৃদ্ধি পাবে তাহলে তারা অধিক বিক্রয় করবে না। এমনকি পূর্বাপেক্ষা কম পরিমাণও বিক্রয় করতে পারে।
৬. পরিবহণ সমস্যা
উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়। যদি উপকরণ না পাওয়া যায় এবং পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক না থাকে, তবে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও যোগান বৃদ্ধি পাবে না।
৭. জনকল্যাণের ক্ষেত্রে
কোনো ফার্মের লক্ষ্য হলো সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। যদি ফার্মের উৎপাদন লক্ষ্য সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে না পারে, অর্থাৎ সমাজের কল্যাণে উৎপাদনের লক্ষ্য হয়, তাহলে দাম হ্রাস পেলেও যোগান হ্রাস পাবে না।
চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা ককে বলে ও উদাহরণসহ এর সূত্র |
৮. কৃষিক্ষেত্রে
কৃষিক্ষেত্রে অনেক সময় বিধিটির ব্যতিক্রম দেখা যায়। ছোট ছোট কৃষি খামারের মালিক অনেক ক্ষেত্রে নিজেই নিজের শ্রমিক। যদি দ্রব্যের দাম কমে যায়, তবে সে অধিকতর পরিশ্রম করে, অধিক ফসল উৎপাদন করে। এতে উৎপাদন ব্যয় কম হয়। ফলে কম দামে যোগান বেশি হয়।
৯. প্রাকৃতিক বিপর্যয়
প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এ অবস্থায় দাম বৃদ্ধি পেলেও যোগান বৃদ্ধি পায় না। আবার অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ অবস্থায় দাম হ্রাস পেলেও যোগান হ্রাস পায় না।
১০. মৌসুমি দ্রব্যের ক্ষেত্রে
মৌসুমি দ্রব্যের ক্ষেত্রে যোগান বিধির ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন- আম, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতির ফলন বৃদ্ধি পেলে একটি বিশেষ সময়ে দাম হ্রাস পেলেও এদের যোগান বৃদ্ধি পায়। আবার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে এসব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও যোগান বৃদ্ধি পাবে না।
যোগান বিধিতে যোগানকে প্রভাবিত করতে পারে এসব উপাদানের মধ্যে শুধু দামকে পরিবর্তনশীল ধরা হয়। অন্যান্য উপাদানকে স্থির ধরা হয়; কিন্তু বাস্তবে এসব উপাদান স্থির থাকে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে যোগান বিধি কার্যকর হতে পারে না।