Home » লেবেলিং তত্ত্ব – Labelling Theory

লেবেলিং তত্ত্ব – Labelling Theory

by Rezaul Karim
লেবেলিং তত্ত্ব

লেবেলিং তত্ত্ব

বিচ্যুতি ও অপরাধের সমাজবিজ্ঞানে লেবেলিং বা আখ্যামূলক তত্ত্বটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। লেবেলিং তত্ত্ব দ্বারা কোন ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব-প্রতিফলনের বিভিন্ন পর্যায়কে বুঝানো হয়ে থাকে।

মৌল বিষয়: এ তত্ত্বের মৌল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সামান্য অপরাধে যদি কোন ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হয় এবং সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ ও শ্যেন দৃষ্টির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হয় তবে সে বড় ধরনের অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

প্রখ্যাত অপরাধবিজ্ঞানী Howard Becker ১৯৬০ সালে বিচ্যুতি ও অপরাধের মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অস্বীকার করে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, Deviant হলো একটি সমস্যা বা ব্যাধি যা Social control process দ্বারা নিরাময় করা যায়। তিনি বলেন, Powerful group বা শক্তিশালী গোষ্ঠী শোষণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে Worker group বা কর্মজীবী গোষ্ঠীর উপর বিচ্যুতি বা অপরাধের Label এঁটে দেয়। ফলশ্রুতিতে Worker group সমাজে Deviant হিসেবে আবির্ভূত হয়।

Becker এর মতানুসারে, আখ্যায়িতকরণ বিষয়টি নির্ভর করে-

ক. কোন সময়ে অপরাধটি সম্পাদিত হয়েছে।

খ. কে অপরাধ করেছে এবং কে তার শিকার হয়েছে এবং

গ. অপরাধ বা কাজের ফলাফল এ তিনটি দিকের উপর।

Howard Becker মনে করেন, নিম্নোক্ত তিনটি স্তরের মাধ্যমে সমাজস্থ ব্যক্তি Deviant হয়:

1. Observation,

2. Labelling,

3. Membership.

1. Observation

বিচ্যুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো Observation বা পর্যবেক্ষণ। কেননা বিচ্যুত আচরণ পর্যবেক্ষণ করেই মানুষ ক্রমে বিচ্যুত আচরণ করতে উৎসাহিত হচ্ছে এবং সমাজে তা প্রযুক্ত ও সঞ্চারিত হচ্ছে। সুতরাং Deviant behaviour পর্যবেক্ষণেরই ফলশ্রুতি।

2. Labelling

কোন সমাজই অপরাধ ও বিচ্যুতি আচরণকে সমর্থন করে না; বরং তা থেকে উত্তরণের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে। সুতরাং কোন ব্যক্তি অপরাধ বা বিচ্যুতির বেড়াজালে আবদ্ধ হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়তে বাধ্য। আর তখনই উক্ত ব্যক্তির উপর Criminal label এর ছাপ পড়ে যায়, সে তখন সমাজের অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে নিন্দিত হয়।

3. Membership

সমাজের যেসব লোক একবার অপরাধ জগতে প্রবেশ করে তাদের পক্ষে আর বেরিয়ে আসা সম্ভবপর হয় না। কেননা সে Real world এর সাথে কিংবা এর অন্তঃস্থ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে খাপখাওয়াতে পারে না। এভাবে সে বিভিন্ন Deviant group বা অপরাধ জগতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে মিলে তাদেরই একজন সদস্য হয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি তার কৃতকর্মের অবস্থা অনুধাবন করতে পারে তবে সেটিকে বলা হয় Primary deviant এবং সে ব্যক্তি যদি ক্রমে এর একজন সদস্য হিসেবে ভাবতে শুরু করে তখন সেটিকে বলা হয় Secondary deviant.

অপরাধের কারণ সমূহ কি কি?

Howard Becker উপরিউক্ত তিনটি স্তরের মাধ্যমে Labelling theory কে সক্রিয়ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, সমাজের সুদৃষ্টি কোন ব্যক্তির উপর নিপতিত হলে সে অনেক মন্দ কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং সমাজের একজন সদস্য হিসেবে সমাজেই Normal life lead করতে সক্ষম হবে।

সমালোচনা

Howard Becker এর লেবেলিং তত্ত্বটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। তিনি অপরাধ সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করলেও তার কারণ ব্যাখ্যা করেন নি। বস্তুত তিনি অপরাধের কারণগত দিকটিকে পরিপূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছেন। তিনি প্রকৃত তত্ত্ব উপস্থাপনের চেয়ে তার তত্ত্বের উপাদানগুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তার তত্ত্বের মূল লক্ষ্য অপরাধমূলক আচরণকে ব্যাখ্যা করা না অপরাধমূলক আচরণের প্রতিক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করা তা স্পষ্ট নয়। কোন ধরনের আচরণ বা প্রতিক্রিয়া বিচ্যুতি বা অপরাধ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হবে তা সুস্পষ্ট নয়।

মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আখ্যামূলক তত্ত্বের সমালোচনা করে বলা হয় যে, এ তত্ত্ব *ক্তিশালীদেরকে সুসংহত করেছে। ব্যাপকভাবে বলতে গেলে এ তত্ত্ব অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ এবং যৌনবাদকে উৎসাহিত করেছে।

পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও অপরাধের কারণ অনুসন্ধান এবং অপরাধীকে বিশ্লেষণের জন্য Howard Becker এর ল্যাবেলিং তত্ত্বটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আশা করি, উপরের পোস্ট থেক লেবেলিং তত্ত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

Related Posts

1 comment

কিশোর অপরাধ কি | কিশোর অপরাধ কাকে বলে January 25, 2024 - 3:18 am

[…] লেবেলিং তত্ত্ব – Labelling Theory […]

Comments are closed.