সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ
সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য – সংস্কৃতি হলো মানুষের আচরণের সমষ্টি। এটি হলো আদর্শ ও রীতিনীতি, চিন্তাচেতনা, প্রথা, মূল্যবোধ, মানবিক ধারণা, ভাব, বিশ্বাস, আচার-আচরণ এবং কলাকৌশলের অবিচ্ছেদ্য সামগ্রিকতা। নিম্নে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করা হলো:
১. সংস্কৃতি অর্জিত হয় (Culture is learned): মানুষ তার প্রয়োজনে সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। সামাজিক পরিবেশে যেহেতু মানুষ লালিতপালিত হয় সেহেতু সামাজিকভাবেই সে সংস্কৃতিকে শিখে এবং তা অর্জন করে। তাই সংস্কৃতিকে প্রায়শই Learned ways of behaviour’ বলা হয়।
২. সংস্কৃতি পরিবর্তনীয় (Culture is variable): স্থান-কাল-পাত্রভেদে সব সমাজেই সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়। যদিও অবস্তুগত সংস্কৃতির তুলনায় বস্তুগত সংস্কৃতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে তথাপি উভয় সংস্কৃতিই পরিবর্তনযোগ্য।
আরও পড়ুন: সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও
৩. জীবনধারা (Way of life): সংস্কৃতি হচ্ছে Way of Life বা জীবনধারা। যে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সমাজের সামগ্রিক জীবনধারাকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতি গড়ে উঠে এবং বংশপরম্পরায় সংযোজন ও বিয়োজনের মধ্য দিয়ে তা বাহিত হতে থাকে।
৪. মনোজাগতিক প্রপঞ্চ (Mental phenomena): সংস্কৃতি হলো মনোজগতের বিষয়। এটি মননশীলতা, চিন্তাচেতনা এবং ধ্যানধারণার সাথে সম্পৃক্ত।
৫. সামাজিক (Social): সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বিদ্যমান থাকে না। এটি একক কোন প্রপঞ্চও নয়। এটি সমাজেরই সৃষ্টি। সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি উৎপত্তি ও বিকাশ লাভ করে। অন্যান্য মানুষের সহযোগিতা ছাড়া কোন ব্যক্তি সংস্কৃতি অর্জন করতে পারে না।
৬. অংশীদারিত্ব (Shared): সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সংস্কৃতি হচ্ছে অংশীদারিত্বের বিষয়। কোন ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে এককভাবে তার অধিকারী হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রথা, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, ধারণা, মূল্যবোধ, নীতিবোধ ইত্যাদিতে কোন গোষ্ঠী বা সমাজের সদস্যদের অংশীদারিত্ব থাকে। Robert Bierstedt এর ভাষায় বলা যায়, “Culture something adopted, used, believed, practiced or possessed by more than one person. It depends upon group life for its existence.”
৭. চলমান এবং ক্রমপুঞ্জীভূত (Continuous and cumulative): সংস্কৃতি একটি চলমান প্রক্রিয়ার মতো বিদ্যমান। এর ঐতিহাসিক প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী এটি ক্রমপুঞ্জীভূত হয় তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। সংস্কৃতি হচ্ছে Growing whole, যার মধ্যে অতীত ও বর্তমানের কীর্তি এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ কীর্তি ও বিনির্মাণের ব্যবস্থা থাকে।
৮. সংগতিপূর্ণ এবং অখণ্ড (Consistent and integrated): সংস্কৃতি সংগতিপূর্ণ, অটল এবং অখণ্ড। সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন সমাজের Value System তার অন্যান্য Aspect যেমন- Morality, religion, customs, traditions, beliefs ইত্যাদির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
৯. কাঠামোভিত্তিক (Structured): সংস্কৃতির একটি কাঠামোভিত্তিক রূপ আছে, যে রূপের মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে। সংস্কৃতির এ রূপটি বস্তুগত বা অবস্তুগত যে কোন ধরনের হতে পারে।
১০. গতিশীল এবং সর্বত্র বিরাজমান (Dynamic and omnipresent): সংস্কৃতি কখনো স্থির থাকে না। এটি কখনো ধীরগতিতে কখনোবা দ্রুতালয়ে প্রবাহমান। পৃথিবীর সকল সমাজে সংস্কৃতি বিদ্যমান। সংস্কৃতিবিহীন সমাজ পৃথিবীতে কল্পনা করা যায় না।
Herskovits এর মতে, সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপ:
ক. সংস্কৃতি অর্জিত হয় (Culture is learned);
খ. সংস্কৃতি মানব অস্তিত্বের জৈবিক, পরিবেশগত, মনস্তাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক উপাদান থেকে গৃহীত হয় (Culture derives from biological, environmental, psychological and historical components of human existence);
গ. সংস্কৃতি কাঠামোভিত্তিক (Culture is structured);
ঘ. সংস্কৃতি তার বিভিন্নমুখী অংশ অনুযায়ী বিভাজনযোগ্য (Culture is divided into aspects);
ঙ. সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল (Culture is variable);
চ. সংস্কৃতি নিয়মানুগ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে বলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এটি বিশ্লেষণ করা যায় (Culture exhibits regularities that permit its analysis by the methods of science);
ছ. সংস্কৃতি একটি যন্ত্রবিশেষ যার দ্বারা ব্যক্তি নিজের সমগ্র অবস্থা পুনর্বিন্যাস করে সৃষ্টিশীল প্রকাশভঙ্গি অর্জন করে (Culture is the instrument whereby the individual adjusts to his total setting and gains the means for creative expression);
জ. সংস্কৃতি গতিশীল এবং সর্বত্র বিরাজমান (Culture is dynamic and omnipresent).