সম্পত্তি
প্রকৃতিকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের হাতিয়ার, কলাকৌশল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি উদ্ভাবন করে মানুষ নিজেদের পার্থিব প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের এ স্বতঃপ্রবৃত্ত ক্রিয়াকর্মই জীবজগৎ থেকে তাকে পৃথক করে দিচ্ছে। খাদ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনের জন্য প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে ব্যবহারের এ এই পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর নিমিত্তে যে সমস্ত প্রথা মোটামুটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে সেসবকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমাজের ব্যবহারিক জীবনে একটি স্থায়ী আসন অধিকার করে আছে।
কালক্রমে খাদ্য সংগ্রহের প্রকৃতি ও পদ্ধতির উপর মানুষের শ্রম প্রক্রিয়ায় যে ব বহুমুখী সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তার উপর ভিত্তি করেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যকলাপ সমাজে স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপযোগের উপর স্বীয় অধিকার স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের মনে সম্পত্তির মালিকানার ধারণা জন্মায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সম্পত্তি।
আরও দেখুন: সুশীল সমাজ কাকে বলে | সুশীল সমাজ কি | সুশীল সমাজ বলতে কি বুঝ
সমাজবিজ্ঞানের সূচনাকাল থেকেই সমাজবিজ্ঞানী, সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানতে গিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সম্পত্তির আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মানুষের সামাজিক জীবনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোন কোন পর্যায়ে কিভাবে সম্পত্তির ধারণার উদ্ভব হয়েছে এবং তা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সম্পত্তির মালিকানার প্রকৃতি নির্ধারিত হয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামতগুলোর সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো-
সম্পত্তিকে যদি একটি সাধারণ অথচ ব্যাপক পরিসরে সংজ্ঞাবদ্ধ করতে চাই তাহলে আমরা বলব, “সম্পত্তি হচ্ছে উপযোগ কোন বস্তু বা বিষয়ের মালিকানা যার উপর সমাজ কর্তৃক মানুষের স্বীকৃত নিরঙ্কুশ অধিকার বর্তায়।” অর্থাৎ যখন কোন বস্তু বা বিষয়ের উপর সমাজ স্বীকৃত নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষ জীবিকানির্বাহের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়, তখন তাকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করতে পারি।
সম্পত্তির সংজ্ঞা
Kingsley Davis এর মতে, “Property is nothing more than rights and obligations with respect to something scarce.” .”* অর্থাৎ, সম্পত্তি সীমিত কোন বিষয়ে মানুষের অধিকার এবং আইনগত বৈধতা ব্যতীত আর কিছুই নয়।
L. T. Hobhouse তাঁর ‘The Historical Evolution of Property’ গ্রন্থে বলেন, “Property is to be conceived in terms of the control of man over things, a control which is recognized by society more or less permanent and exclusive.”” অর্থাৎ, সম্পত্তি হচ্ছে কোন বিষয় বা বস্তুর উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত, কমবেশি স্থায়ী ও একচেটিয়া।
মানব সমাজে সম্পত্তির বিবর্তন আলোচনা কর |
William P. Scott এর ভাষায়, “Property is a socially sanctioned recognition of a group of individuals rights privileges and responsibilities with relation to an object, resource or activity.”৬ অর্থাৎ, সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এমন সব অধিকার, সুযোগ সুবিধা এবং দায়িত্ব যা কোন বস্তু, সম্পদ বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং যা সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত।
আধুনিক সমাজচিন্তাবিদগণ মনে করেন যে, মানুষ তার সৃজনশীল ক্ষমতার মাধ্যমে অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে কোনকিছু অর্জন করে সমাজে তার অধিকার ও কর্তব্য প্রতিষ্ঠা করে থাকে, সেই অধিকার ও কর্তব্যের আধারকে সম্পত্তি বলে।