রাষ্ট্র একটি সংগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যে চারটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় সরকার তাদের মধ্যে অন্যতম। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, এর স্পর্শে একটি জনসম্পদ রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং এর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের ইচ্ছা ও অনিচ্ছা, আদেশ ও নিষেধ প্রকাশিত হয়। রাষ্ট্রের মূল পরিচালক হলো সরকার।
সরকার কাকে বলে?
সীমিত অর্থে, সরকার বলতে রাষ্ট্রের কাজে নিয়োজিত শাসন, আইন ও বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বুঝায়।
ব্যাপক অর্থে, সরকার বলতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে বুঝায়।
আরও দেখুন: নেতৃত্ব কি | নেতৃত্ব কাকে বলে
সরকারের সংজ্ঞা
সমাজবিজ্ঞানী P. A. Sorokin বলেন, “রাষ্ট্র হলো তার কর্তৃত্বাধীন জনগণের সকল গোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক তত্ত্বাবধান ও চাপ প্রশমনের সংগঠন।”
অধ্যাপক গেটেল বলেন, “সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি সংস্থা বা যন্ত্র।”
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গার্নার এর মতে, “সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি কার্যনির্বাহী মাধ্যম যার সাহায্যে রাষ্ট্রের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ধারণানুযায়ী, “The word ‘Government’ judged by its philogical derivation apparently has a close affinity to the rudder or steering of a ship.” অর্থাৎ, সরকারের সাথে জাহাজের হাল শব্দটির সম্পর্ক রয়েছে। হাল ছাড়া যেমন কর্ণধারের পক্ষে জাহাজ চালানো সম্ভব হয় না, তেমনি সরকার না থাকলে জনতা অসংলগ্ন ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং সুষ্ঠুভাবে কোন কাজই তাদের দ্বারা সম্ভব হয় না।
অতএব বলা যায়, সরকার রাষ্ট্রের একটি সংগঠিত অংশ এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা এর মাধ্যমে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। তাই অধ্যাপক লাস্কির ভাষায় বলা হয়, “The state for all practical purposes is the government.”
সরকারের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য
১. নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে জনসংখ্যাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সংগঠিত করা;
২. জনকল্যাণের জন্য কাজ করা;
৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা;
৪. ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা;
৫. দেশকে রক্ষা করা।
আরও দেখুন: নেতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা
সরকারের প্রকারভেদ
R. M. MacIver তাঁর ‘Modern State’ গ্রন্থে ‘The Web of Government’ এ সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন নিম্নোক্তভাবে :
১. সাংবিধানিক ভিত্তিতে:
ক) রাজতন্ত্র,
খ) একনায়কতন্ত্র,
গ) ধর্মতন্ত্র,
ঘ) বহুনায়কতন্ত্র,
ঙ) প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র,
চ) সীমিত রাজতন্ত্র, ও
ছ) প্রজাতন্ত্র।
২. অর্থনৈতিক ভিত্তিতে:
ক) প্রাচীন সরকার,
খ) সামন্ত সরকার,
গ) ধনতান্ত্রিক সরকার,
ঘ) সমাজতান্ত্রিক সরকার, ও
ঙ) সাম্যবাদী সরকার।
৩. সাম্প্রায়িক বা জনসমষ্টিগত ভিত্তিতে:
ক) উপজাতীয় সরকার,
খ) নগর রাষ্ট্র সরকার,
গ) দেশীয় সরকার,
ঘ) জাতীয় সরকার,
ঙ) বহুজাতভিত্তিক সরকার, ও
চ) বিশ্ব সরকার।
৪. সার্বভৌমিকতার ভিত্তিতে:
ক) এককেন্দ্রিক সরকার,
খ) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার, ও
গ) সাম্রাজ্যবাদী সরকার।
পরিশেষে বলা যায়, যাদের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার ন্যস্ত থাকে তাদেরকে সমষ্টিগতভাবে সরকার বলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এ সরকার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে বলে আশা করা যায়।