সামষ্টিক অর্থনীতি
অর্থনীতিতে লর্ড কেইনস (Lord Keynes)-কে সামষ্টিক অর্থনীতির জনক বলা হয়। তিনি ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত The General Theory of Employment Interest and Money’ শীর্ষক বিখ্যাত গ্রন্থে সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্ব আরোপ করেন। ‘সামষ্টিক অর্থনীতি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘Makros’ হতে উদ্ভূত। ‘Makros’ শব্দের অর্থ ‘বৃহৎ’। কাজেই একক বা ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সমস্যার বিশ্লেষণ না করে যখন সামগ্রিক বা জাতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার আলোচনা করা হয়, তখন তাকে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অধ্যাপক হেন্ডারসন (Henderson) ও কুয়ান্ট (Quandt) বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতি সামগ্রিক বিষয়াদি যেমন মোট কর্মসংস্থান, জাতীয় আয় প্রভৃতি আলোচনা করে।” (Macro economics which is the study of broad aggregates such as total employment, national income etc.)
অধ্যাপক কে. ই. বোল্ডিং (K. E. Boulding) বলেন, “সামষ্টিক অর্থনীতি কোনো ব্যক্তির আয়ের পরিবর্তে জাতীয় আয়, কোনো নির্দিষ্ট দ্রব্যমূল্যের পরিবর্তে সাধারণ মূল্যস্তর, দ্রব্যের ব্যক্তিগত উৎপাদনের পরিবর্তে জাতীয় উৎপাদন আলোচনা করে।” (Macro economics deals not with individual incomes but with national income, not with individual prices but with the general price. level, not with individual output but with national output.)
ও. এম. এমোস (Orley M. Amos JR) -এর ভাষায়, “সামষ্টিক অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির শাখা, যা সমগ্র অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে।” (Macro economics is the branch of economics that studies the entire economy.)
অর্থনীতিবিদ গ্যান্ডনার একলির মতে, “অর্থনৈতিক আচরণের খণ্ডিত নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ আলোচনাই সামষ্টিক অর্থনীতি।” অর্থনীতিবিদ লিভাকিকের মতে, “সমগ্র অর্থনীতির পর্যালোচনাই সামষ্টিক অর্থনীতি।”
ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে | ব্যষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি |
ব্যষ্টিককে নিয়েই সামষ্টিক। এজন্য সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটি জাতি কীভাবে আয় করে, কীভাবে ব্যয় করে এবং কীভাবে সঞ্চয় করে তা আলোচনা করা হয়। এভাবে জাতীয় আয়, জাতীয় সঞ্চয়, জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় ব্যয় ইত্যাদি সামষ্টিক অর্থনীতিতে মোট সংস্থান কীভাবে মোট উৎপাদন দ্বারা নির্ধারিত হয় তা দেখিয়েছেন। উৎপাদন দেশের মোট চাহিদা, মোট সঞ্চয়, মোট পুঁজি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। কাজেই অর্থনীতির সামগ্রিক রূপ হলো সামষ্টিক অর্থনীতি।
সামষ্টিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
১. সামষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থব্যবস্থার সামষ্টিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
২. সামষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির বৃহৎ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতির পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।
৩. সামষ্টিক অর্থনীতিতে কোনো দেশের জাতীয় উৎপাদন, জাতীয় ভোগ, জাতীয় সঞ্চয়, দামস্তর, মজুরি স্তর, জাতীয় বণ্টন, জাতীয় আয়-ব্যয়, বিনিয়োগ স্তর ইত্যাদি বিষয় পঠন-পাঠন ও গবেষণা করা হয়।
৪. সামষ্টিক অর্থনীতির মাধ্যমে অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়।
৫. সামষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির প্রায়োগিক দিক আলোচনা করে।
৬. লর্ড জে, এম, কেইন্সসহ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ সামষ্টিক অর্থনীতির অনুসারী।
৭. সামষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক খাতসমূহে সামগ্রিকভাবে আলোচিত হয় বলে খাতসমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকে।
৮. সামষ্টিক অর্থনীতিতে যা পরিবর্তনশীল, ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে তা স্থির।
৯. সামষ্টিক অর্থনীতিতে অপূর্ণ নিয়োগের ভারসাম্য বিবেচনা করা হয়, যা বাস্তবসম্মত।
১০. সামষ্টিক অর্থনীতি দ্বারা সামগ্রিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
ইসলামি অর্থব্যবস্থা কাকে বলে | ইসলামি অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য |