সামাজিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য সমূহ
নিচে সামাজিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করা হলো-
১. সামাজিক পরিবর্তন ধারাবাহিক: সমাজ অন্তঃপরিবর্তন প্রক্রিয়ায় আবর্তিত। এ পরিবর্তন বাদ দেয়া সম্ভব নয়। ইতিহাসের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে।
২. পরিবর্তন সাময়িক: পরিবর্তন সময়ের প্রেক্ষিতে হয়। সময়ের দৃষ্টিতে এটি সাময়িক। সত্যিকার অর্থে সময়ের মধ্যেই সমাজের অবস্থান। Maclver বলেন, “It is a beacoming, not a being; a process not a product.” নতুন কিছু আবিষ্কার, আচরণের সংস্কার কিংবা নতুন আচরণে অভ্যস্ত হওয়া, পুরাতন আচরণকে বাদ দেয়া ইত্যাদি সব কিছুই সময়ের ব্যবধানে হয়ে থাকে।
সামাজিক পরিবর্তন কাকে বলে | সামাজিক পরিবর্তন কি |
৩. সামাজিক পরিবর্তন পরিবেশগত: সামাজিক পরিবর্তন অবশ্যই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সম্পাদিত হয়ে থাকে। মানুষের আচরণের উপর এসব পরিমণ্ডলের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ফলে মানুষও এগুলোর পরিবর্তন ঘটায়। সামাজিক পরিবর্তন কখনই শূন্যে সাধিত হয় না।
৪. সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে মানবীয় পরিবর্তন: সামাজিক পরিবর্তনের সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে যে এটি মানবীয় দিকগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সমাজের বিভিন্ন গঠনকারী উপাদানগুলো স্থিতিশীল নয় বরং পরিবর্তনশীল। তাই মানুষ পরিবর্তন করে আবার পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ দু’টি দিকই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সামাজিক বিভিন্ন ঘটনার আন্তঃক্রিয়ার ফলাফল: যদিও একটি নির্দিষ্ট ঘটনা নির্দিষ্ট পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে, তথাপি তা বহুবিধ ঘটনার সাথে যুক্ত থাকে। কাঠামোগত, শরীরগত, কৌশল ও প্রযুক্তিগত, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক ঘটনাবলি আন্তঃনির্ভরশীল।
৬. সামাজিক পরিবর্তন ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে: কোন একটি ক্ষেত্রের ঘটনার পরিবর্তন অন্য ক্ষেত্রে ক্রমাগত পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন- মহিলাদের অধিকার, মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রেক্ষিতে তার পরিবারে, সামাজিক সম্পর্কের কাঠামোতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ধারার একটি ধারাবাহিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
৭. পরিবর্তনের হার ও নির্দেশনা থাকে: সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সব সময় পরিবর্তনের একটি নির্দিষ্ট ধারা বা নির্দেশনা ধরে নেয়া হয়। এ দিক বা নির্দেশনা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কখনো কখনো আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ নির্দেশনাকে ধরে নেয়া হয়। পরিবর্তনের নির্দিষ্ট গন্তব্যে বা নির্দেশনায় পরিচালনাকে বলা যায় ‘Progress’। সামাজিক পরিবর্তন সত্যিকার অর্থে যে কোন দিকেই ধাবিত হতে পারে। পরিবর্তনের হার বা গতি সর্বজনীন নিয়ম বা আইনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। পরিবর্তনের হার সময় ও সমাজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
৮. সামাজিক পরিবর্তন পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত হতে পারে: পরিবর্তনের গতি ও দিক অনেক সময় মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। সামাজিক পরিবর্তন যখন মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় তখন তা পরিকল্পিত পরিবর্তন। আবার যখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদির কারণে পরিবর্তন হয় তখন তা অপরিকল্পিত পরিবর্তন।
৯. স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন: কোন কোন সামাজিক পরিবর্তন তাৎক্ষণিক ফল বয়ে আনে এবং কিছু কিছু সামাজিক পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদি ফল বয়ে আনে। এ বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা আজকে যে পরিবর্তনটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে সময়ের আবর্তে তা মানব জীবনের ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী স্পন্দন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ কারণেই ঐতিহাসিকগণ বলেন, সময়ই ঘটনাকে তার সত্যিকার অবস্থানের প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করে।
কৃষিভিত্তিক সমাজ ও বৈশিষ্ট্য |
১০. সামাজিক পরিবর্তন উদ্দেশ্যমূলক প্রত্যয়: সামাজিক পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোন মূল্যবোধগত বিষয় বা বিচার এর সাথে জড়িত নয়। সমাজবিজ্ঞানীদের নিকট সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বা অর্থনৈতিক বিষয়টি জড়িত নয়। এটি নীতির বা নৈতিকতার সাথে সম্পর্কহীন। নীতিগতভাবে এটি নিরপেক্ষ।
১১. নিরবচ্ছিন্নতা: সামাজিক পরিবর্তনের কারণসমূহের মধ্যে নিরবচ্ছিন্নতা অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তন সত্ত্বেও সমাজের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা বজায় থাকে। প্রত্যেক সমাজের একটা নিজস্ব ধারা থাকে। এ ধারা ব্যাহত হয় না।
অতএব, উল্লেখিত লেখা থেকে আপনারা সামাজিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে জানতে পারলেন। লেখাটি থেকে উপকৃত হলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।