সুশীল সমাজ কি বা কাকে বলে
সক্রিয় সামাজিক কর্মকাণ্ড ও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণকারী নাগরিক গোষ্ঠীকে সুশীল সমাজ বা নাগরিক সমাজ বলা হয়। সুশীল সমাজ হলো সংগঠিত স্বার্থের যোগফল যার কাজ হলো সঠিক এবং যুক্তিনির্ভর রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুসরণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংরক্ষণ, যথার্থ উন্নয়ন, সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষা বৃদ্ধি তথা সার্বিক রাষ্ট্র যন্ত্রকে অধিক কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করতে সুশীল সমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুশীল সমাজের ধারণা সপ্তদশ শতকে প্রখ্যাত দার্শনিক Hobbes এর লেখা থেকে Civil Society ধারণাটির উদ্ভব হয়। এরপর থেকে নানা বিবর্তনে ও নানা ব্যাখ্যায় প্রত্যয়টি উদ্ভাসিত হয়েছে।
সুশীল সমাজ হচ্ছে মূলত গণতান্ত্রিক চেতনা সমৃদ্ধ সমাজ। অস্ত্রধারী নাগরিক সমাজের বিপরীতে নিরস্ত্র মানুষের সমাজকেই সুশীল সমাজ বলা যেতে পারে। রাষ্ট্র ও সমাজে এ নিরস্ত্র মানুষের সমাজকেই সুশীল সমাজ বলা যেতে পারে।
আরও দেখুন: রাজনৈতিক দল কাকে বলে | রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
UNDP-র মতানুযায়ী, সুশীল সমাজ হলো সেই ক্ষেত্র যেখানে সামাজিক আন্দোলন জন্ম নেবে ও বিকশিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সরদার আমিনুল ইসলামের মতে, “It is a realm intermediate between the family and the state. The key institutions of civil society are voluntary association, mass media and print media, professional associations, trade union. কে. এম. সোবহান তাঁর ‘সিভিল সোসাইটি ও আইনের শাসন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে বাংলাদেশের সমাজনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে বলতে হলে প্রথমেই যে দুর্বলতাকে অতিক্রম করতে হবে তা হচ্ছে এর অর্থ। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শব্দটি আলোচনা করলে বাংলায় এর যে অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছে শব্দটি গণতান্ত্রিক সমাজ।
সুশীল সমাজের ভিত্তি গণতন্ত্রায়ন, বহুত্ববাদ, আইনের শাসন, সুশাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, পরিবেশ সংরক্ষণ, সামাজিক স্থিতিশীলতা।
L. Diamond এর মতানুযায়ী, সুশীল সমাজের শ্রেণিবিন্যাস
Bratton তাঁর Civil Society and Political Institution in Africa (1994) শীর্ষক প্রবন্ধে নাগরিক সমাজ গঠন ও অর্থবহ করার জন্য ৩টি পূর্বশর্তের তাগিদ দিয়েছেন। এগুলো হলো:
১. অর্থসম্পদের যোগান
২. সাংগঠনিক
৩. আদর্শগত
সুশীল সমাজের উদ্দেশ্যাবলি
১. মুক্তির জন্য সংগ্রাম।
২. নাগরিকদের আন্দোলন ও সংগঠন।
৩. সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের জন্য প্রচারণা।
৪. সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা।
৫. ভূমিজ বা আদিবাসী সংস্কৃতি সংরক্ষণ।
৬. মানবিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য কাজ করা।
৭. গণতন্ত্রায়ন, ভিন্নমত পোষণ, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
আরও দেখুন: রাজনৈতিক দলের কার্যাবলী গুলো কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা
সুশীল সমাজের বৈশিষ্ট্য
১. বেসামরিক এবং নিরস্ত্র।
২. গণতন্ত্রের প্রতি অনুরাগী।
৩. রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত।
৪. নির্বাচন ও আন্দোলনমুখী।
৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়।
৬. সরকারের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে সুশীল সমাজ।
৭. সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সমাজের আওতাভুক্ত।
৮. মৌলিক ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা।
৯. জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
১০. বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
১১. মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবী শ্রেণির গুরুত্ব।
অতএব বলা যায়, সুশীল সমাজ হলো এমন একটি সুসংগঠিত সংস্থা যার নিচে পরিবার এবং উপরে রাষ্ট্র। নাগরিকের নানামুখী সংগঠন নিয়েই বিকশিত হয় এ সমাজ। এখানে সবাই একত্রিত হয় স্বেচ্ছায়, কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে যৌথ। এটি রাষ্ট্রকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে এবং রাষ্ট্র ও বিভিন্ন মাধ্যমে সুশীল সমাজকে প্রভাবিত করতে পারে।