ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ১৭৯৮ সালে, নীতিবাগীশ, সুপণ্ডিত ধর্মযাজক, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ থমাস রবার্ট ম্যালথাস (Rev. Thomas Robert Malthus) “জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সম্পর্ক” বিষয়ক যে বক্তব্য “An Essay on the Principles of Population…” নামক গ্রন্থে প্রচার করেন, এটি ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব নামে পরিচিত। এ তত্ত্বকে ‘জনসংখ্যার জৈবিক ও সামাজিক তত্ত্ব’ বা ‘Natural and Social Theories of Population.’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
মূলবক্তব্য: ম্যালথাসের তত্ত্বের মূলভিত্তি ছিল জনসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং জীবনধারণের উপকরণ খাদ্য বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে। (‘By nature human food increases in a slow arithmetical ratio, but man himself increases in a quick geometrical progression’-Malthus)
এক্ষেত্রে, জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো জনসংখ্যা বাড়ে ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২, ৬৪ ইত্যাদি হারে এবং খাদ্য বাড়ে, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ইত্যাদি হারে। তিনি মনে করেন, আর্থিক সামর্থ্যের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি হলে মানুষের উন্নতি ও সুখ হবে না। সীমিত সম্পদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অর্থনৈতিক সুখকে নস্যাৎ করে দেয়।
আমদানি বিকল্প শিল্প কি? বাংলাদেশে আমদানি বিকল্প শিল্পের গুরুত্ব |
অনুমিত শর্ত: ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব বিশ্লেষণে নিম্নোক্ত অনুমিত শর্ত গ্রহণ করা হয়:
(১) জীবনধারণের উপকরণ তথা খাদ্যের যোগান সীমিত।
(২) নর-নারীর মধ্যে আকর্ষণ প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রিত ও শাশ্বত।
(৩) কৃষিতে ক্রমহ্রাসমান উৎপন্ন বিধি প্রযোজ্য।
(৪) একমাত্র উৎপাদন ব্যবস্থা হলো কৃষি।
(৫) জমি ও উৎপাদন ক্ষমতা অপরিবর্তিত।
(৬) উৎপাদন প্রযুক্তি অপরিবর্তিত।
তত্ত্বের বিশ্লেষণ: ম্যালথাস ২৫ বছর সময়কে একক হিসেবে ধরে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ২৫ বছর অন্তর যে হারে পরিবর্তিত হয় তাকে নিম্নের সূচির সাহায্যে দেখানো যায়:-
বছর | ০ | ২৫ | ৫০ | ৭৫ | ১০০ | … | ২০০ | … | ৩০০ |
জনসংখ্যা বৃদ্ধি | ১ | ২ | ৪ | ৮ | ১৬ | … | ২৫৬ | … | ৪০৯৬ |
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | … | ৯ | … | ১৩ |
জনসংখ্যা ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির উপরিউক্ত সম্পর্ক থেকে বোঝা যায়, ১০০ বছরে খাদ্য বাড়বে ৫ গুণ কিন্তু জনসংখ্যা বাড়বে ১৬ গুণ, একইভাবে তিন শতাব্দী পরে খাদ্য বাড়বে ১৩ গুণ কিন্তু জনসংখ্যা বাড়বে ৪০৯৬ গুণ এবং দু’ হাজার বছর পরে এ দুয়ের ব্যবধান হবে অপরিমেয়।
ম্যালথাস ‘Poor Laws‘-এ মন্তব্য করেন, গরিবদের কষ্টের ভার লাঘব করার প্রচেষ্টা পৃথিবীকে নিকৃষ্টতর মানুষে ভরে দিবে, খাদ্য ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সরবরাহে অপ্রতুলতা দেখা দিবে, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাবে। ফলে সে তাঁর অজ্ঞাতসারে নিজের ও পরিবারের দুঃখ-কষ্টের সাথে দেশের অন্যদেরও দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি করবে। তাঁর মতে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা ও ক্ষুধার্ত মুখ। ‘এ যেন কুকুরের লেজ ধরার খেলা। মুখ যতটা লেজের কাছে যায়, লেজও ততখানি সরে যায়।’
লেখচিত্র:
জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্যে সূচিতে উল্লিখিত সম্পর্কটি নিম্নের রেখাচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলো:
চিত্র বিশ্লেষণ: চিত্রে ভূমি অক্ষে প্রতি ২৫ বছর সময়কে একক হিসেবে ধরা হয় এবং লম্ব অক্ষে খাদ্য উৎপাদন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিমাপ করা হয়। প্রতি ২৫ বছর অন্তর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে তথা ১, ২, ৩, ৪, ৫….। এভাবে প্রাপ্ত বিন্দুসমূহের সমন্বয়ে খাদ্য রেখা পাওয়া যায় UF। সূচি থেকে প্রাপ্ত প্রতি একক সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাপ দ্বারা জনসংখ্যা রেখা পাওয়া যায় UP.
চিত্র থেকে লক্ষ্য করা যায়, ২৫ বছর সময়ের পর খাদ্য বৃদ্ধির হার অপেক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক হয়। ১০০ বছর সময়ের মধ্যে উভয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয় abc পরিমাণ।
বিকল্প ব্যাখ্যা:
ম্যালথাসের উল্লিখিত জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের সম্পর্কটি প্রয়োজনীয় পরিমাপ গ্রহণ করে নিম্নে বারচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো:
লেখচিত্র:
চিত্র বিশ্লেষণ: চিত্রে ভূমি অক্ষে সময় ও লম্ব অক্ষে খাদ্য ও জনসংখ্যার সম্পর্ক দেখানো হয়। চিত্র থেকে বোঝা যায়, ২৫ বছর সময়ে খাদ্য ও জনসংখ্যার সম্পর্ক সমান থাকলেও ৫০, ৭৫, ১০০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খাদ্য বৃদ্ধির হার অপেক্ষা অধিক হয়। এভাবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জনসংখ্যা ও খাদ্যের মধ্যে অভারসাম্য দেখা দেয় এবং প্রকৃতিতে নানারূপ বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা ও সমাধান আলোচনা কর |