বৈদেশিক সাহায্য কি?
একটি দেশের জরুরি প্রয়োজনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খাদ্য, ওষুধ, প্রকল্প, দান, অনুদান, ঋণ, আর্থিক ও কারিগরি যেকোনো ধরনের দেশ বহির্ভূত সহায়তা গ্রহণ এবং প্রদানকে বৈদেশিক সাহায্য বলে।
বৈদেশিক সাহায্য কত প্রকার?
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সব বৈদেশিক সাহায্যকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
(ক) খাদ্য সাহায্য: এক্ষেত্রে শুধু মাত্র চাল এবং গমকে বোঝানো হয়।
(খ) প্রকল্প সাহায্য: দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যে সাহায্য গ্রহণ বা প্রদান করা হয় তা বোঝায়। যেমন: বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্প, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেল লাইন প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্প, উত্তর-পশ্চিম সেচ প্রকল্প, মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রভৃতি
(গ) অপ্রকল্প সাহায্য: অপ্রকল্প সাহায্য বলতে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রীর সাহায্য প্রাপ্তি বোঝায়। যেমন- ভোজ্য তেল, টিনজাত দুধ, ডাল, ওষুধপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, গভীর ও অগভীর নলকূপ প্রভৃতি।
এছাড়াও রয়েছে-
সামরিক সাহায্য: কোনো দেশ অপর কোনো দেশ হতে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে যে সব সাহায্য গ্রহণ করে থাকে, তাকে সামরিক সাহায্য বলে।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI): বিশেষ করে বিভিন্ন ধনী দেশের পুঁজিপতিরা বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ করে থাকে। এটি একটি আকর্ষণীয় প্রাপ্তি এবং বর্তমানে এ ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ বা আমদানি বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপরে উল্লিখিত সাহায্যকে আবার নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়। যেমন-
(i) দান, অনুদান ও ঋণ: দান করা অর্থ বা দ্রব্য সাহায্য কখনো দাতা দেশকে ফেরত দিতে হয় না। গ্রহীতা দেশকে
দানের অর্থ ব্যয়ের খাত বা উৎস দাতা দেশ নির্ধারণ করে না। অনুদান কোনো বিশেষ খাতে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রদান করা হয়। এ অনুদানের অর্থও ফেরত দিতে হয় না। ঋণ কোনো বিশেষ কর্ম বা প্রকল্প ব্যয় নির্বাহের জন্য গ্রহণ করা হয়। ঋণের সুদ ও আসল দুটিই নির্ধারিত সময়ে ফেরত দিতে হয়।
বিশ্বায়নের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর |
(ii) নগদ সাহায্য ও দ্রব্য সাহায্য: নগদ সাহায্য বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলার, ইউরো, পাউন্ড, ইয়েন …) এবং দ্রব্য সাহায্য-চাল, গম, যন্ত্রপাতি, সার, পরামর্শক প্রভৃতি আকারে পাওয়া যায়।
(iii) শর্তযুক্ত ও শর্তযুক্ত সাহায্য: যে সাহায্যের সাথে নমনীয় বা কঠিন শর্তযুক্ত থাকে তাকে শর্তযুক্ত সাহায্য আবার যে সাহায্যের সাথে কোনোরূপ শর্ত যুক্ত থাকে না, তাকে শর্তহীন সাহায্য বলে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্যের ভূমিকা
বাংলাদেশ উপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ বিধ্বস্ত, গরিব, জনসংখ্যার ভারে আক্রান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত একটি দেশ। বর্তমানে এখনো ২৩.৫ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জাতীয় সঞ্চয় GDP এর ৩০.৩০ ভাগ। মোট উন্নয়ন পরিকল্পনায় এখনো প্রায় অর্ধেক অপেক্ষা বেশি বৈদেশিক সাহায্য দ্বারা মেটানো হয়। বৈদেশিক সাহায্যের বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১. স্বল্প সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র। তাদের কম আয়, কম সঞ্চয় অথচ ভোগ অপরিবর্তনীয় বা নানা ধরনের উৎসব দিবস পালনে ব্যয় বেশি হয়ে পড়ে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে উন্নয়নের লক্ষ্যে যেরূপ বিনিয়োগের প্রয়োজন তা দেশীয়ভাবে সংস্থান করা সম্ভব হয় না বিধায় বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যবধান
বাংলাদেশের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল দেশগুলোয় রপ্তানি আয় অপেক্ষা আমদানি ব্যয় অধিক। বাংলাদেশ কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে যা স্বল্প মূল্যের পক্ষান্তরে আমদানি করে মূলধন দ্রব্য ও শিল্পজাত পণ্য যা উচ্চ মূল্যের। ক্রমাগত লাগামহীন আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশকে প্রতি বছর ঋণ সাহায্য গ্রহণ করতে হয়।
৩. খাদ্য ঘাটতি
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ঘাটতির ফলে খাদ্য আমদানি করতে হয়। যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হয় তা দ্বারা ব্যাপক চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
এছাড়া কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, বেকার সমস্যা দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। তাই সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থেই বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন।