হিসাব সমীকরণ
কোনো লেনদেন সংঘটিত হলে এর কোনো লেনদেন সংঘটিত হতে হলে দুটি পক্ষ দরকার- একটি দাতা, অন্যটি গ্রহীতা এবং তা সমপরিমাণ। লেনদেনের এই বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেই একটি পক্ষ ডেবিট এবং অন্য পক্ষটি ক্রেডিট। অর্থাৎ দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতির সৃষ্টি। একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের পরিমাণ এবং মোট দায়ের পরিমাণ সমান হবে। আধুনিক হিসাব শাস্ত্রবিদগণ এই নীতির উপর ভিত্তি করে লেনদেনসমূহকে বিশ্লেষণ করার একটি গাণিতিক সূত্র প্রকাশ করেছেন, যা হিসাব সমীকরণ নামে পরিচিত।
সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয় – ব্যাখ্যা কর |
হিসাব সমীকরণের সূত্র
হিসাব সমীকরণের সূত্রটি হলো-
মোট সম্পদ = মোট দায়
(Total Assets) = (Total Equities)
মোট দায়-এর মধ্যে দুই ধরনের দায় অন্তর্ভুক্ত। একটি হচ্ছে দায় বা Liabilities, যা প্রতিষ্ঠানের সম্পদের উপর বাহ্যিক ব্যক্তি বা সংস্থার দাবিকে বুঝায়। অন্যটি হলো মালিকানা স্বত্ব বা Owners Equity, যা অভ্যন্তরীণ বা মালিকের দাবির সমষ্টি। এখন সমীকরণের বর্ধিত রূপ দাঁড়াচ্ছে-
Assets = Liabilities + Owner’s Equity;
বা, সম্পদ = দায় = মালিকানাস্বত্ব
বা, A=L+OE
এটিই হচ্ছে মৌলিক হিসাব সমীকরণ। প্রত্যেকটি লেনদেন হিসাব সমীকরণের তিনটি মৌলিক উপাদান- (১) সম্পদ (২) দায় (৩) মালিকানাস্বত্ব এর পরিবর্তন ঘটায়। তবে প্রতিটি লেনদেন হিসাব সমীকরণের সবগুলো মৌলিক উপাদানের পরিবর্তন ঘটাবে এমন নয়। লেনদেনগুলো সমীকরণের তিনটি মৌলিক উপাদানের উপর সমতা রেখে প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে সমীকরণের উভয় পার্শ্বের সমতার নীতি বা ভারসাম্য অটুট থাকে।
মালিকানাস্বত্ব বলতে মালিকের ইক্যুইটি বা মূলধন এবং আয়-ব্যয়ের ফলাফল তথা নীট আয়ের যোগফলকে বুঝায়। অর্থাৎ আয় অথবা ব্যয় এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে তা সরাসরি মালিকের মূলধনের পরিমাণকে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। আয় হলে মূলধন তথা মালিকানাস্বত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ব্যয় হলে মূলধন তথা মালিকানাস্বত্ব হ্রাস পায়, সুতরাং সমীকরণের বর্ধিত রূপটি হবে-
সম্পদ = দায় + (মূলধন + আয় – ব্যয়)
Assets = Liabilities + (Capital + Revenue – Expenses)
A=L+(C+R-E)
আবার মালিকের ব্যক্তিগত উত্তোলনের (Drawings) কারণে মালিকানাস্বত্ব হ্রাস পায়। সুতরাং, চূড়ান্তভাবে হিসাব সমীকরণকে আমরা বর্ধিত আকারে নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপন করতে পারি,
সম্পদ = দায় + (মূলধন + আয় – ব্যয় – উত্তোলন)
Assets Liabilities + (Capital + Revenue – Expenses – Drawing)
হিসাব সমীকরণের উপাদান সমূহ
ভাই হিসাব সমীকরণ প্রক্রিয়া ভালোভাবে বুঝতে হলে সমীকরণের উপাদানগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। উপাদানগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. সম্পদ (Assets)
সম্পদ বলতে কারবারের মুনাফা অর্জন কাজে ব্যবহারযোগ্য এবং টাকায় মূল্যায়নযোগ্য অর্থনৈতিক বস্তু বা সেবার সমষ্টিকে বুঝায়, যেমন: ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, নগদ অর্থ, মজুতপণ্য, দেনাদার, প্রাপ্য নোট, অগ্রিম ব্যয়, সুনাম প্যাটেন্ট ইত্যাদি।
লেনদেন কত প্রকার ও কি কি? |
২. দায় (Liabilities)
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয়কৃত পণ্য বা সেবার মূল্যস্বরূপ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে হবে এমন দেনা (Obligation) বা ঋণকেই ‘দায়’ বলে, যেমন, বিবিধ পাওনাদার, ঋণ, ঋণপত্র, বকেয়া ব্যয়সমূহ, বন্ধকী ঋণ ইত্যাদি।
৩. মালিকানাস্বত্ব (Owner’s Equity)
মালিকানাস্বত্ব বলতে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের উপর মালিকের দাবির পরিমাণকে বুঝায়। মালিকের স্বত্বকে “অবশিষ্ট দাবি” (Residual claim) নামে অভিহিত করা হয়। কারণ প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ হতে বাহ্যিক ব্যক্তি বা সংস্থার দাবি বা দায় বাদ দিলে অবশিষ্ট অংশ হলো মালিকের পাওনা বা ইক্যুইটি।