রেওয়ামিল কাকে বলে?
রেওয়ামিল হলো খতিয়ানস্থিত হিসাবসমূহের উভয় পার্শ্বের যোগফলের ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্তের একটি তালিকা বিশেষ। খতিয়ানভুক্ত হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনে একটি আলাদা খাতায় বা একখণ্ড আলাদ্য কাগজে সমুদয় হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট জেরগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে যে বিবরণী তৈরি করা হয় তাকে রেওয়ামিল বলে। নিচে রেওয়ামিল প্রসঙ্গে কয়েকজন প্রখ্যাত লেখকের সংজ্ঞা দেয়া হলো-
(i) আর, এন কার্টার এর মতে, “রেওয়ামিল হলো নগদান বই হতে সংগৃহীত নগদ ও ব্যাংক উদ্বৃত্তসহ অন্যান্য খতিয়ানস্থিত হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্তের তালিকা বা ফর্দ।”
(ii) আরওয়েক্সন এন্ড আর জি কক্স এর মতে, “রেওয়ামিল হলো খতিয়ানে রক্ষিত প্রতিটি হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট জেরের একটি তালিকা।”
(iii) ডব্লিউ, বি, মিগস এন্ড আর, এফ, মিগস এর মতে, “সকল হিসাবসমূহের ডেবিট ও ক্রেডিট জেরের সমতা বিধানকারী প্রমাণ পত্রকে রেওয়ামিল বলে।”
উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রেওয়ামিল কোনো হিসাবখাত নয় অথবা এটা হিসাবের কোনো অপরিহার্য অংশ নয়। এটা খতিয়ানস্থিত হিসাবসমূহের একটি তালিকা মাত্র। অর্থাৎ যে তালিকায় খতিয়ানস্থিত হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য খতিয়ানের ডেবিট জেরগুলোকে ডেবিট দিকে ক্রেডিট জেরগুলোকে ক্রেডিট দিকে লিখে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয় তাকে রেওয়ামিল বলে।
জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য দেখাও |
রেওয়ামিল প্রস্তুতের উদ্দেশ্য
রেওয়ামিল যদিও কোনো হিসাবখাত নয় তবুও হিসাবরক্ষকগণ হিসাবরক্ষণ কাজের নির্ভুলতা যাচাই করার জন্য এবং চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করার পূর্বে পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ রেওয়ামিল তৈরি করে থাকে। রেওয়ামিল তৈরির উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ-
১ . হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
২. দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেন ডেবিট এবং ক্রেডিট এ বিশ্লেষিত হয়ে হিসাবের বইতে যথাযথভাবে লিপিবন্ধ হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
৩. চূড়ান্ত হিসাব তৈরির সুবিধার্থে এবং পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন হিসাবের জেরগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে জের করার উদ্দেশ্যে রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
৪. হিসাবরক্ষণে বড় ভুলত্রুটি সহজে উদ্ঘাটন করার উদ্দেশ্যে রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
৫. সময় ও শ্রমের অপচয় রোধ করার জন্যও রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
উপরিউক্ত উদ্দেশ্যগুলো সাধন করার উদ্দেশ্যে মূলত রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
রেওয়ামিল করার নিয়ম
নিচে রেওয়ামিল করার নিয়ম বা প্রস্তুত প্রণালি বর্ণনা করা হলো-
১. প্রথমে একখণ্ড কাগজের পৃষ্ঠায় অথবা এতদউদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত আলাদা রেওয়ামিল বইয়ের পৃষ্ঠায় জাবেদা ঘরের মতো ৫টি ঘর এঁকে রেওয়ামিলের ছক তৈরি করতে হয়। উক্ত ৫টি ঘরের নাম হবে যথাক্রমে ক্রমিক নম্বর, হিসাবের নাম, খতিয়ান পৃষ্ঠা, ডেবিট টাকার ঘর এবং ক্রেডিট টাকার ঘর।
২. খতিয়ানের ক্রমানুসারে রেওয়ামিলের ছকে ক্রমিক নম্বরের ঘরে ক্রমিক নম্বর, হিসাবের নামের ঘরে খতিয়ানস্থিত হিসাবের নাম খতিয়ান পৃষ্ঠার ঘরে খতিয়ান বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর, ডেবিট টাকার ঘরে খতিয়ানস্থিত হিসাবের ডেবিট জের এবং ক্রেডিট টাকার ঘরে খতিয়ানস্থিত হিসাবের ক্রেডিট জের লিখতে হবে।
খতিয়ানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর |
৩. সর্বশেষে রেওয়ামিলের ডেবিট টাকার ঘরের ও ক্রেডিট টাকার ঘরের যোগফল আলাদাভাবে বের করতে হবে, যা পরস্পর সমান হয়ে থাকে।
৪. এরপর রেওয়ামিলের উভয় পার্শ্বের যোগফলের নিচে দুটি সমান দাগ টেনে হিসাব বন্ধ করে দিতে হবে।
আশকরি, উপরের আলোচনা থেকে রেওয়ামিল কাকে বলে ও রেওয়ামিল প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।