প্রকৃত জাবেদা
কারবার প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনসমূহকে লেনদেনের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রাথমিক হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া ক্রয় বহি, বিক্রয় বহি, ক্রয় ফেরত বহি ও নগদান বহিকেও হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়। কারবার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লেনদেনসমূহকে, যেমন- ধারে ক্রয়, ধারে বিক্রয়, ক্রয় ফেরত, বিক্রয় ফেরত এবং নগদ লেনদেনসমূহকে সংশ্লিষ্ট জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
রেওয়ামিল কাকে বলে? রেওয়ামিল করার নিয়ম বা প্রস্তুত প্রণালি |
কিন্তু কারবার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন কিছু লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে যা উল্লিখিত কোনো প্রাথমিক হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা যায় না, নির্দিষ্ট প্রাথমিক হিসাবের বইগুলোতে লিপিবন্ধ করা যায় না। এমন সব লেনদেন লিখে রাখার জন্য যে প্রাথমিক হিসাবের বহি ব্যবহৃত হয়, তাকে প্রকৃত জাবেদাকরণ দাখিলা, ভুল সংশোধনকরণ দাখিলা ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
নিচে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো:
প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে বিভিন্ন দাখিলাসমূহ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে বিধায় এর প্রয়োজনীয়তা বা পুরুত্ব অপরিসীম। নিচে প্রয়োজনীয় দিক তুলে ধরা হলো:
১. প্রারম্ভিক দাখিলা: চলতি বছরের হিসাবের খাতায় পূর্ববর্তী বছরের সম্পত্তি ও দায়ের স্থানান্তর করার জন্য যে জাবেদার প্রয়োজন হয় তাকে প্রারম্ভিক দাখিলা বলে। প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে প্রারম্ভিক দাখিলা পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা যায়।
২. স্থানান্তর দাখিলা: যে দাখিলার মাধ্যমে খতিয়ানের কোনো একটি হিসাব হতে অন্য কোনো হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয় তাকে স্থানান্তর দাখিলা বলে। প্রকৃত জাবেদায় এটা লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে।
৩. ভুল সংশোধনকরণ দাখিলা: সাধারণত প্রকৃত জাবেদায় ভুল সংশোধনকরণ দাখিলা পদ্ধতি নির্দিষ্ট আকারে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে।
৪. হিসাব বন্ধনের দাখিলা: চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুতের ক্ষেত্রে নামিক হিসাব বন্ধ করার জন্য এ দাখিলার প্রয়োজন হয় এবং এ দাখিলার মাধ্যমে উক্ত নামিক হিসাব বন্ধ করা হয়।
৫. বিলের প্রত্যাখ্যান বিষয়ক দাখিলা: কোনো কারণে যদি বিলসমূহ প্রত্যাখ্যান হয়ে থাকে তাহলে উক্ত প্রত্যাখ্যানসমূহ লেনদেনকে এ দাখিলার মাধ্যমে হিসাবের খাতায় লিখতে হয়। প্রকৃত জাবেদায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিলের প্রত্যাখ্যান বিষয়ক দাখিলা লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে।
উপরিউক্ত বহুবিধ সুবিধার কারণে প্রকৃত জাবেদা বহি এত গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাদৃত।
প্রকৃত জাবেদায় কোন কোন লেনদেনগুলো লেখা হয়?
কে একটি প্রতিষ্ঠানে যেসব বিশেষ জাবেদা বই রেখে থাকে সেগুলোতে যেসব লেনদেন লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়, সেইগুলোই প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। একটি প্রতিষ্ঠান প্রকৃত জাবেদায় সাধারণত যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করে থাকে তা নিম্নরূপ:
১. প্রারম্ভিক দাখিলা: কারবারের প্রারম্পে আনীত সম্পত্তি এবং বিগত বছরের যাবতীয় সম্পত্তি ও দায়দেনাসমূহকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রারক্ষিক দাখিলার মাধ্যমে জাবেদাভুক্ত করা হয়।
২. সমাপনী দাখিলা: চূড়ান্ত হিসাব তৈরির সময় কারবারের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবসমূহের সমষ্টি বা জের প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে আয় বিবরণীতে স্থানান্তর করে সমাপ্তি টানা হয়।
কোন কোন ভুল রেওয়ামিলে ধরা পড়ে না এবং কোনগুলো ধরা পড়ে? |
৩. ভুল সংশোধনী জাবেদা: হিসাবের ভুলত্রুটি সংক্রান্ত সংশোধনী প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে করা হয়।
৪. স্থানান্তর দাখিলা: প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে এক হিসাব হতে অন্য হিসাবে স্থানান্তর সংক্রান্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়।
৫. সমন্বয় দাখিলা: চূড়ান্ত হিসাব তৈরি করার সময় প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে সমন্বয় দাখিলা দ্বারা অলিখিত হিসাবগুলোর সমন্বয় সাধন করা হয়।
৬. বিলের প্রত্যাখ্যানজনিত দাখিলা: প্রত্যাখ্যাত বিলের লেনদেনসমূহ প্রকৃত বা সাধারণ জাবেদায় লেখা হয়। লেখা হয়।
৭. অন্যান্য দাখিলা: এছাড়াও ধারে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং মালিক কর্তৃক ব্যবসা হতে পণ্য গ্রহণের দাখিলা প্রকৃত জাবেদায় লেখা হয়।