প্রিয় পাঠক, আপনি কি বাট্টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে সঠিক ব্লগেই এসেছেন। আজকের লেখায় আমি আলোচনা করবো বাট্টা কি, বাট্টা কত প্রকার, কারবারি বাট্টা কি, নগদ বাট্টা কাকে বলে সহ নগদ বাট্টা ও কারবারি বাট্টার পার্থক্য গুলো সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নিই।
বাট্টা কি?
ব্যবসায় জগতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় এর ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা পণ্যের তালিকা মূল্য হতে সুনির্দিষ্ট হারের কম মূল্যে ক্রেতার নিকট পণ্য বিক্রয় করে থাকে, এছাড়াও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কিছু কম মূল্য নেওয়া হয়। আবার দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় পাওনাদার কর্তৃক দেনাদারকে কিছু টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এভাবে পণ্যের তালিকা মূল্য হতে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা বা পাওনা টাকা হতে কিছু টাকা মওকুফ করা হলে তাকে বাট্টা বলে।
প্রকৃত জাবেদা কাকে বলে? প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় কোন কোন লেনদেনগুলো? |
বাট্টা কত প্রকার ও কি কি?
বাট্টা সাধারণত তিন প্রকার। যথা-
(১) কারবারি বাট্টা,
(২) পরিমাণ বাট্টা ও
(৩) নগদ বাট্টা
১. কারবারি বাট্টা
পণ্যের উৎপাদক পাইকারি ব্যবসায়ীকে বা পাইকার খুচরা ব্যবসায়ীকে বিক্রিত পণ্যের তালিকা মূল্য হতে ঘোষিত নীতির অনুকূলে পণ্য বিক্রয়ের সময় যে পরিমাণ মূল্য মওকুফ করে দেয় তাকে কারবারি বাট্টা বলে।
২. পরিমাণ বাট্টা
পরিমাণ বাটা এক প্রকার কারবারি বাট্টা, যা বিক্রেতা পণ্যের ক্রেতাকে বিক্রিত পণ্যের পরিমাণের ভিত্তিতে মঞ্জুর করে থাকে, প্রতিবার পণ্য ক্রয়ের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিক্রেতা ক্রেতাকে এরূপ বাট্টা প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ ক্রয়ের উপর স্বাভাবিক কারবারি বাট্টা প্রদানের পর ক্রয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট হতে বেশি হলে মূল্যের যে অতিরিক্ত ছাড় বা রেয়াত ক্রেতাকে দেওয়া হয় তাকে পরিমাণ বাট্টা বলে।
৩. নগদ বাট্টা
ধারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হতে সৃষ্ট দেনাদারের নিকট হতে পাওনা টাকার প্রতিশ্রুতি তারিখের পূর্বে পরিশোধ করার জন্য দেনাদারকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে পাওনাদার কর্তৃক দেনাদারকে যে ছাড় বা রেয়াত প্রদান করা হয় তাকে নগদ বাট্টা বলে। এটা সবসময় পাওনা টাকার উপর প্রদান করা হয়। নগদ বাট্টা সবসময় টাকার প্রাপ্তি বা টাকা পরিশোধের সাথে জড়িত থাকে।
নগদান বই কাকে বলে? নগদান বই কত প্রকার ও কি কি? |
নগদ বাট্টা ও কারবারি বাট্টার মধ্যে পার্থক্য
নগদ বাটা ও কারবারি বাটার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
পার্থক্যের বিষয় | নগদ বাট্টা | কারবারি বাট্টা |
১. সংজ্ঞা | প্রতিশ্রুত তারিখের পূর্বে পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য পাওনাদার দেনাদারকে যে ছাড় দেয় তাকে নগদ বাট্টা বলে। | পণ্যের তালিকা মূল্য হতে ঘোষিত নীতির ভিত্তিতে পণ্যের ক্রেতাকে বিক্রেতা যে পরিমাণ পণ্য মূল্য মওকুফ করে তাকে কারবারি বাট্টা বলে। |
২. সৃষ্টি | নগদ বাট্টা দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে সৃষ্টি হয়। | কারবারি বাট্টা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে সৃষ্টি হয়। |
৩. নির্ধারণ | নদগ বাট্টা পাওনার পরিমাণ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়। | কারবারি বাট্টা পণ্যের তালিকা মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়। |
৪. উদ্দেশ্য | প্রতিশ্রুত তারিখের পূর্বে দেনা পরিশোধে উৎসাহিত করার জন্য দেনাদারকে এ বাট্টা দেওয়া হয়। | সর্বত্র একই মূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে খুচরা ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার জন্য কারবারি বাট্টা দেওয়া হয়। |
৫. আর্থিক পরিবর্তন | নগদ বাট্টা দু’পক্ষের আর্থিক পরিবর্তন ঘটায়। | কারবারি বাট্টা সংশ্লিষ্ট পক্ষের আর্থিক পরিবর্তন ঘটায় না। |
৬. প্রয়োগ | এটি লেনদেনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে প্রয়োগ করা হয়। | এটি ব্যবসায়ের বিক্রয়নীতি হিসাবে প্রয়োগ করা হয়। |
৭. ক্ষেত্র | যে কোনো রকম দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির সময় নগদ বাট্টা দেওয়া ও নেওয়া যায়। | শুধুমাত্র পণ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কারবারি বাট্টা প্রয়োগ করা হয়। |