Home » আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও

আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও

by Rezaul Karim
আইন কি, আইন কাকে বলে, আইনের সংজ্ঞা দাও,

আইন কি বা কাকে বলে?

সাধারণ অর্থে আইন বলতে বোঝায় সুনির্দিষ্ট কতগুলো নিয়মকানুনকে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীব হিসাবে সমাজে বসবাস করার কারণে মানুষকে নানাপ্রকার নিয়মনীতি, বিধি ও রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। সমাজ গঠনের প্রারম্ভ থেকেই এ সকল বিধি-বিধানবলী মেনে চলা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী সামাজিক প্রথা, রীতিনীতি, এতিহ্য প্রভৃতিকে সামাজিক আইন বলে অভিহিত করা যায়। রাষ্ট্রের উৎপত্তির সাথে সাথে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে জীবন পরিচালনা করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রীয় আইনের। শাসকের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা ও শাসিতের সাথে শাসকের সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক সমাজকে সুশৃঙ্খলিত রাখার প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় আইনের বিবর্তন এবং প্রয়োগ ঘটেছে। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকবে ততদিনই রাষ্ট্রীয় আইনের বিবর্তনও অব্যাহত থাকবে।

আরও দেখুন:   স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

ব্যাপক অর্থে আইন শব্দটি সমাজজীবনের অসংখ্য নিয়ম কানুন ও বিধিবিধানকে বুঝালেও সংকীর্ণ অর্থে আইন বলতে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় আইনকে বুঝায়। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষই আইন সৃষ্টি করে আবার স্ব-সৃষ্ট আইন দ্বারা মানুষ নিজেই শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

আইন একটি ফারসি শব্দ। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Law’-এর উৎপত্তি টিউটনিক শব্দ ‘Lag’ থেকে। ‘Law’ শব্দের অর্থ ‘স্থির’ বা ‘অপরিবর্তনীয়’ এবং এটি সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।

আইনের সংজ্ঞা

বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে আইনকে ব্যাখ্যা করেছেন।

অধ্যাপক হল্যান্ড বলেন, আইন হচ্ছে সেসব সাধারণ নিয়ম যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োগ করেন (A Law is a general rule of external action enforced by the sovereign authority.)।

স্যাভিনীর মতে, আইন প্রণয়ন রাষ্ট্রের কাজ নয়। রাষ্ট্রের প্রকৃত কাজ হলো আইনের যথার্থ উপলব্ধি ও তার প্রয়োগ।

সমাজবিজ্ঞানী দুগুই (Duguit) এবং ক্রাবে (Krabbe) বলেছেন, আইনের সৃষ্টি হয় বিভিন্ন সামাজিক কারণ ও প্রভাবের ফলে এবং সামাজিক কল্যাণ সাধন করাই হলো আইনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

অধ্যাপক স্যলমন্তের মতে “ন্যায় সংরক্ষণের তাগিদে রাষ্ট্র যে সকল নীতি স্বীকার করে এবং প্রয়োগ করে, সেগুলোই আইন।”

সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আইনকে শুধুমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি এবং এক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নও মুখ্য নয়। এ সকল চিন্তাবিদগণ আইন লক্ষ্য বা উদ্দেশের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি উইলসনের সংজ্ঞায় আইন সম্পর্কিত বিশ্লেষণাত্মক ঐতিহাসিক ধারণার সার্থক সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, “আইন হলো মানুষের স্থায়ী আচার-ব্যবহার ও চিন্তাধারার সেই অংশ যা সাধারণ নিয়মাবলী হিসেবে সুস্পষ্ট এবং আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং যার পেছনে সরকারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বিদ্যমান।”

অধ্যাপক গেটেল উইলসনের অভিমতকে সমর্থন করে বলেছেন যে, যে সকল নিয়ম রাষ্ট্র সৃষ্টি, স্বীকার ও বলবৎ করে সেগুলিই আইনে পরিণত হয় (Only those rules which the state creates or which it recognizes and enforces becomes law)।

জন অস্টিন (John Austin)-এর কথায়, ‘সার্বভৌম শাসকের আদেশই আইন।’ (Law is the command of the sovereign.)

স্যার হেনরি মেইন (Sir Henry Maine), জন অস্টিন ও অধ্যাপক হল্যান্ডের আইনের সংজ্ঞা দুটিকে সমালোচনা করে বলেছেন- ‘সার্বভৌম শক্তির খেয়ালখুশি হতে উদ্ভূত অনুশাসনকে আইন বলা যায় না বরং পরিবর্তনশীল, ক্রমবর্ধমান সামাজিক প্রথার যোগফলকে বলা হয় আইন।’

আরও দেখুন:   মূল্যবোধ কি | মূল্যবোধ কাকে বলে | মূল্যবোধ বলতে কি বুঝায়

অধ্যাপক গেটেল (Prof. Raymond Garfield Gettell) বলেন- ‘রাষ্ট্র যে সকল নিয়ম-কানুন তৈরি করে, অনুমোদন দেয় এবং প্রয়োগ করে সেগুলোই আইনে পরিণত হয়।’ (Only those rules which the state creates of which it recognized and enforced become laws.)

দার্শনিক থমাস হবস (Thomas Hobbes) এর মতে- ‘প্রজাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আদেশই আইন।’ (The civil law is the command of him which endowed with supreme power in the state concerning the future actions of his subjects.) গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতে, ‘আইন হলো আবেগবর্জিত যুক্তি।’ (Law is the passionless reason).

বার্কার (Barker) মনে করেন-‘কেবল সরকারের স্বীকৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিষয়গুলোকে আইন বলা সঙ্গত নয়। আইনের মধ্যে বৈধতা (Legal Sanction) এবং নৈতিক মূল্য থাকা প্রয়োজন।’

আইন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুসংহত করে। এটি সমাজবদ্ধ মানুষের সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের পথ প্রশস্ত করে। বস্তুত আইন সর্বজনীন ও সর্বগ্রাহী।

আইনের বৈশিষ্ট্য

আইন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নিচে আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো- 

১. সমাজে বসবাসকারী সকলকেই আইন মেনে চলতে হয়। আইন ছাড়া সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই আইনের কোনো বিকল্প নেই।

২. আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। আইনের অনুশাসন কারও পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আইনের ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ করা হয় না। ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বংশ, ধর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে আইনে কোনো তারতম্য করা হয় না।

৩. আইন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের দ্বারা অনুমোদিত ও স্বীকৃত। জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আইনকে অর্থবহ করে তোলে। অনুমোদন ও স্বীকৃতির অভাবে আইন তার সত্যিকার ও যথাযথ অবয়ব লাভ করতে পারে না।

৪. আইন মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও অনেক সময় আইনের উপস্থিতি ও আইনের দ্বারা সম্ভাব্য শাস্তির ভয়ে মানুষের মানসিক গতি ও ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রেই আইন প্রযোজ্য। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রেই আইনের প্রয়োজন সমভাবে অনুভূত হয়।

প্রাচীনকালের আইনগুলো ছিল ধর্মভিত্তিক। তাই ধর্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ আইন মেনে চলত। কিন্তু বর্তমানের আধুনিক যুগে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাস্তির ভয়ে আইন মেনে চলে। এছাড়াও অধিকার সংরক্ষণের জন্য, ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সম্প্রীতি বজায় রাখা প্রভৃতি কারণেও মানুষ আইন মেনে চলে। এ প্রসঙ্গে হবস বলেছেন, ‘মানুষ ভালো করেই জানে যে আইন অমান্য করলে সমাজের মধ্যে পুনরায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে, এ সত্য উপলব্ধি থেকেই মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার শিক্ষা নেয়।’ জন অস্টিন মনে করেন, ‘আইন রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ও জনসাধারণ কর্তৃক সমর্থিত এবং প্রযুক্ত হয় বলে মানুষ আইন মেনে চলে।’

‘আইনের অনুশাসন’ কে স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ বলে বর্ণনা করেছেন কে?

আইনের অনুশাসন কে স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ বলে বর্ণনা করেছেন টমাস হবস।

Related Posts

2 comments

আইনের উৎস কয়টি ও কী কী? - বিস্তারিত আলোচনা December 26, 2023 - 6:47 am

[…] আরও দেখুন:   আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও […]

আইন কত প্রকার ও কি কি? - বিস্তারিত আলোচনা December 27, 2023 - 5:26 am

[…] আরও দেখুন:   আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও […]

Comments are closed.