Home » আইনের উৎস কয়টি ও কী কী? – বিস্তারিত আলোচনা

আইনের উৎস কয়টি ও কী কী? – বিস্তারিত আলোচনা

by Rezaul Karim
আইনের উৎস কয়টি ও কী কী

আইনের উৎস

অধ্যাপক হল্যান্ড আইনের ছয়টি উৎসের কথা বলেছেন। যথা- ১. প্রথা; ২. ধর্ম; ৩. বিচারকের রায়; ৪. আইনবিদদের গ্রন্থ; ৫. ন্যায়বোধ; ৬. আইনসভা।

তবে উল্লিখিত ছয়টি উৎস ছাড়াও আইনের আরো কতিপয় উৎস রয়েছে। নিচে আইনের উৎস গুলো উল্লেখ করা হলো:

১. প্রথা

সুদীর্ঘকাল ধরে সমাজে প্রচলিত আচার-ব্যবহার, রীতিনীতিকে প্রথা বলা হয়। প্রথা হলো আইনের প্রাচীনতম উৎস। কোনো এক সময়ে কোনো এক ব্যক্তি হয়তো বিশেষ একটি রীতি সমাজে প্রবর্তন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে যখন সমাজের অনেকেই সেই রীতি অনুসরণ করতে থাকে তখনই তাকে প্রথা বলা হয়। প্রাচীনকালে পরিবারের সঙ্গে পরিবারের, গোষ্ঠীর সঙ্গে গোষ্ঠীর বিরোধ দেখা দিলে পরিবারপ্রধান বা গোষ্ঠীপতি প্রচলিত প্রথা অনুসারে সেইসব বিরোধের নিষ্পত্তি করতেন। কালক্রমে সেইসব আচার-আচরণ জনসমর্থন লাভ করলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সেগুলো আইনের মর্যাদা লাভ করে। উদাহরণ হিসেবে ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্মুরাবি তার সমাজের মূল্যবোধগুলো Coding (কোডিং) করে একটি আইনের বই লিখেছিলেন। আধুনিককালেও প্রতিটি রাষ্ট্রের আইনের মধ্যে প্রথাগত আইনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ায় সেখানে প্রথাগত আইন ও শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

আরও দেখুন:   আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও

২. ধর্মীয় বিধিবিধান

ধর্ম আইনের একটি প্রধান উৎস। ধর্মীয় অনুশাসন এবং ধর্মগ্রন্থ হতে আইনের উৎপত্তি হয়ে থাকে। মধ্যযুগে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতা একই হস্তে পরিচালিত ছিল। শাসনকর্তা রাজ্য শাসন করতে গিয়ে ধর্মীয় বিধিবিধান প্রয়োগ করতেন। বর্তমানেও ধর্মীয় বিধিবিধান থেকে উৎপত্তিগত আইন অনেক দেশে কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর পারিবারিক, সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনটি ইসলাম ধর্মীয় গ্রন্থ ও বিধিবিধান থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ফলে এই আইনকে সবাই মেনে চলে ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ থেকে, বাধ্য হয়ে নয়।

৩. বিচারকের রায়

বিচারক অনেক সময় বিচারকালে নতুন নতুন আইন সৃষ্টি করেন। যখন প্রচলিত কোনো আইন দ্বারা কোনো মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না তখন বিচারকদের নতুন আইন তৈরি করে তার নিষ্পত্তি করতে হয়। এভাবে প্রণীত আইনকে ‘বিচারক প্রণীত আইন’ (Judge Made Laws) বা ‘বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা’ (Judicial Review) বলা হয়।

৪. বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা

প্রখ্যাত আইনবিদদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনাও আইনের অন্যতম একটি উৎস। আইনজ্ঞদের ব্যাখ্যা ও আলোচনা অনেক সময় আইনের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করে। এ ব্যাখ্যা আদালতে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে গৃহীত হয়ে থাকে। মুসলিম আইন গ্রন্থ ‘হেদায়া’ ও ‘আলমগিরি’; ইংল্যান্ডের কোক (Coke) লিখিত ‘ইনস্টিটিউটস’, আলবার্ট ভ্যান ডাইসি (Albert Venn Diecy) লিখিত ‘ল অব দি কনস্টিটিউশনস’ ইত্যাদি গ্রন্থ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

৫. ন্যায়বোধ

ন্যায়বোধ আইনের অপর একটি মূল্যবান উৎস। বিচারকগণ অনেক সময় বিচারকার্য সম্পন্ন করতে গিয়ে সামাজিক ন্যায়বোধ ও বিচার-বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। বিচারকদের ন্যায়বোধ হতে এভাবে নতুন আইন সৃষ্টি হয়।

৬. আইনসভা

আইনসভাকে আইনের আধুনিক উৎস বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রত্যেক দেশের আইনসভা রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য যাবতীয় আইন প্রণয়ন করে। এক্ষেত্রে অবশ্য জনমতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে স্বীকৃত। আইনসভা প্রণীত আইন সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়।

আরও দেখুন:   স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

৭. জনমত

জনমত আইনের উৎসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইন প্রণয়নের সময় জনমতের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রেখে প্রণয়ন করা উচিত। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ অপেন হেইমার- এর ভাষায়, ‘জনমত আইনের অন্যতম উৎস।’

৮. নির্বাহী ঘোষণা ও ডিক্রি

আধুনিককালে শাসনব্যবস্থার জটিলতার কারণে আইনসভা তার কর্তৃত্বের এক বিরাট অংশ শাসনবিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে অর্পণ করে। এছাড়া শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে স্বীয় ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় ঘোষণা ও ডিক্রি জারি করে থাকেন। এরূপ জারিকৃত সকল ঘোষণা বা আদেশকে প্রশাসনিক আইন বলা হয়।

আইনের প্রাচীন উৎস কোনটি?

আইনের প্রাচীন উৎস হলো প্রথা।

আইনের প্রধান উৎস কোনটি?

আইনসভা।

Related Posts