Home » আইন কত প্রকার ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা

আইন কত প্রকার ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা

by Rezaul Karim
আইন কত প্রকার ও কি কি

আইন কত প্রকার

আইনের শ্রেণিবিভাগ প্রধানত দুটি ভিত্তির ওপর করা যায়। যথা-

১. আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের পার্থক্যের ভিত্তিতে,

২. আইন কাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে।

আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের পার্থক্যের ভিত্তিতে আইনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. আইন পরিষদ কর্তৃক রচিত সংবিধি (Statutes)

যা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন পরিষদ কর্তৃক রচিত হয়।

খ. শাসন বিভাগীয় নির্দেশ (Ordinance)

যা শাসন বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশেষ অবস্থায় প্রবর্তিত হয়। সাধারণত আইনসভা ভেঙে গেলে শাসন বিভাগ এ ধরনের আইন জারি করে থাকে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন।

আরও দেখুন:   আইন কি | আইন কাকে বলে | আইনের সংজ্ঞা দাও

গ. সাধারণ আইন (Common Law)

যা সমাজের প্রচলিত প্রথা, রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ও অভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণ আইনসমূহ বিভিন্ন বিচারালয় কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত। বিচারকদের ন্যায়পরায়ণতার প্রকাশ ও উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সাধারণ আইনসমূহ সমাজজীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে থাকে। আইন কার বা কাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে আইনকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. পৌর আইন (Municipal Law): পৌর আইন রাষ্ট্রীয় আইন বলে অভিহিত। এটি রাষ্ট্রের সকল নাগরিক ও সংস্থাসমূহের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বেসরকারি ও গণ-আইনের সমষ্টিকে পৌর আইন বলে উল্লেখ করেছেন।

২. আন্তর্জাতিক আইন (International Law): আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী আইনের নাম আন্তর্জাতিক আইন। এ আইন দ্বারা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে অপর একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি রাষ্ট্রই একে অপরের সাথে কোনো না কোনো কারণে সম্পর্কযুক্ত। কোনো রাষ্ট্রই বর্তমানে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আত্মনির্ভরশীল নয়। প্রতিটি রাষ্ট্রই অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক প্রয়োজনের তাগিদেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ ঘটেছে। মানবসমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বমানবতার ঐক্য ও সংহতি এবং বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে।

৩. বেসরকারি আইন (Private Law): এ আইন নাগরিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে। বেসরকারি আইন রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্টি হয় না। মানুষের আচরণগত নীতি ও যুক্তিবোধ হতেই এ আইনের উদ্ভব ঘটে।

৪. গণ-আইন (Public Law): এ আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। গণ- আইনকে রাষ্ট্রীয় আইনও বলা হয়। কারণ রাষ্ট্রের সংগঠন, আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক এবং কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকারের সম্পর্কও এ আইনের অন্তর্ভুক্ত।

৫. সাংবিধানিক আইন (Constitutional Law): সাংবিধানিক আইন বলতে এমন কতিপয় নীতিকে বোঝায় যার মাধ্যমে সরকারের শাসন ক্ষমতা এবং শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা ও সেই ক্ষমতার পরিধি নির্ণীত হয়। এ আইন লিখিত ও অলিখিত উভয় প্রকারই হতে পারে।

আরও দেখুন:   আইনের উৎস কয়টি ও কী কী? – বিস্তারিত আলোচনা

৬. প্রশাসনিক আইন (Administrative Law): দেশের সাধারণ আদালত ছাড়া অন্য একটি বিশেষ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে সরকারি কর্মচারীদের বিচার ও অভিযুক্ত করার আইনকে প্রশাসনিক আইন বলা হয়। এ আইন কেবল সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; দেশের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে নয়। ফ্রান্সে এ আইনের প্রচলন রয়েছে।

৭. ফৌজদারি আইন ও দণ্ডবিধি (Criminal Law and Procedure): যে আইন দ্বারা রাষ্ট্রীয় অধিকার ভঙ্গ করা হতে কাউকে বিরত রাখা হয় এবং শাস্তির বিধান করা হয় তাকে ফৌজদারি আইন বলে এবং যে সকল বিধানের মাধ্যমে অপরাধীকে দণ্ডদানের জন্যে বিচার বিভাগকে ক্ষমতা দেওয়া হয় সেগুলোকে ফৌজদারি দণ্ডবিধি বলা হয়। নিচে চিত্রের সাহায্যে আইনের প্রকারভেদ দেখানো হলো-

আইনের প্রকারভেদ ছক

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আমরা আইন কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। আইন হলো একটি সমাজের শৃ্ঙ্খলা রক্ষার কতগুলো বিধান। আমাদের সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইন মেনে চলতে হবে। তবেই আমাদের সমাজ সুন্দর হয়ে উঠবে।

Related Posts

2 comments

Comments are closed.