নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উপায়
নারী নির্যাতন বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। সমাজের অন্যান্য সমস্যার সাথে রয়েছে এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। সুতরাং একক এবং বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে নারী নির্যাতনকে বিবেচনা না করে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী নির্যাতন সমস্যাকে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত। নারী নির্যাতন সমস্যা বিবেচনা করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যায়:
১. শিক্ষা বিস্তার
নিরক্ষরতা এবং অজ্ঞতার কারণেই বেশিরভাগ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। সুতরাং আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে নারী পুরুষের কমনীয় পূত-পবিত্র মানসিক গুণাবলি এবং সহানুভূতির বিকাশ সাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ যাতে পারিবারিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মানসিকতা অর্জন দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সক্ষম হয়ে গড়ে উঠে। শিক্ষাই হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উত্তম পন্থা।
নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ৫টি কারণ আলোচনা কর |
২. দারিদ্র্য দূরীকরণ
বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ জনদারিদ্র্য। পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতাকে কেন্দ্র করেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। সুতরাং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ব্যতীত নারী নির্যাতন সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
৩. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের বিকেন্দ্রীকরণ
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৮৬ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল খোলা হয়। এর কার্যক্রম সম্পর্কে দেশের মহিলা সমাজ তেমন জ্ঞাত নয়। উপজেলা পর্যায়ে নারী নির্যাতন সেলের কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং সেবা গ্রহণে মহিলাদের সচেতন করে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ। যাতে গ্রামীণ নির্যাতিত মহিলা সমাজ প্রতিরোধ সেলের সাহায্য পেতে সক্ষম হয়।
৪. সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগ
বাংলাদেশের নারী নির্যাতন রোধকল্পে ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮৩ সালের নারী নির্যাতন আইন, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত আইনসহ নারী পাচার এবং এসিড নিক্ষেপের জন্য বিশেষ কতকগুলো আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলোর যথাযথ প্রয়োগের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। কারণ অপরাধীকে শাস্তিদান ব্যতীত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
৫. কুরুচিসম্পন্ন চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধকরণ
ভি. সি. আর. সিনেমা এবং ভিডিও ক্লাব যাতে বিদেশী অরুচিসম্পন্ন এবং যৌন উত্তেজনাধর্মী চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সরবরাহ করতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬. সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি
ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে নারী পুরুষের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো। এক্ষেত্রে গ্রামীণ সমাজসেবা প্রকল্প গোষ্ঠী কেন্দ্র (কমিউনিটি সেন্টার) এবং মাদার্স ক্লাবগুলো ব্যবহার করা যায়।
নারী নির্যাতনের প্রভাব আলোচনা কর |
৭. বিদেশে নারী ও শিশু পাচার বন্ধকরণ
আন্তর্জাতিক চক্রের প্রভাবে নারী ও শিশু পাচারে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা যাতে করে দেশে বিদেশে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগের উদ্দেশ্যে নারী অপহরণ এবং পাচারে কেউ যেন এগিয়ে না আসে।
৮. দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা
নারী নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আইন প্রয়োগের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইন এবং বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সমাধান করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে বিচার ব্যবস্থার প্রতি নির্যাতিত মহিলারা আস্থাশীল হয়ে উঠে।
৯. নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
নারীসমাজ পরিবার এবং সমাজে যাতে উপার্জনকারী সদস্য হিসেবে মর্যাদাসহকারে বসাবস করতে পারে, তার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কর্মহীন এবং পুরুষের উপর নির্ভরশীল জীবনধারা বজায় রেখে সমাজে নারীর মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়, তেমনি নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়।
পরিশেষে বলা যায়, নারী নির্যাতনের মতো জটিল সমস্যার সমাধান সহজসাধ্য নয়। তবে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সকলের মিলিত প্রয়াসে বিশ্ব সমাজ থেকে নারী নির্যাতন নির্মূল করাটাই হবে সকলের একান্ত কাম্য।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা নারী নির্যাতন প্রতিরোধের উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে পারলেন।