সমাজের প্রকারভেদ
সমাজ কত প্রকার সে সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীরা তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে মানবসমাজের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। ফলে দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে মানবসমাজের নানামুখী ধরন নির্ণীত হয়েছে। সামাজিক নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মানবসমাজকে ছয়টি শ্রেণিতে বিন্যাসিত করা হয়েছে। যথা:
১. শিকার ও খাদ্য সংগ্রহমূলক সমাজ (Hunting and Food Gathering Society),
২. উদ্যান কৃষিভিত্তিক সমাজ (Horticultural Society),
৩. পশুপালন ভিত্তিক সমাজ (Pastoral Society),
৪. কৃষিভিত্তিক সমাজ (Agrarian Society),
৫. শিল্পভিত্তিক সমাজ (Industrial Society),
৬. শিল্পোত্তর বা আধুনিকোত্তর সমাজ (Post-industrial or Post Modern Society).
অন্যদিকে, সমাজ কত প্রকার সে সম্পর্কে Karl Marx ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তথা উৎপাদন প্রণালির বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকে ছয়টি শ্রেণিতে বিন্যাসিত করেছেন:
১. আদিম সাম্যবাদ (Primitive Communism),
২. দাসভিত্তিক সমাজ (Slavery),
৩. সামন্ততান্ত্রিক সমাজ (Feudalism),
৪. ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী সমাজ (Capitalism),
৫. সমাজতান্ত্রিক সমাজ (Socialistic Society), ৬. আধুনিক সাম্যবাদী সমাজ (Modern Communism).
উপরিউক্ত পাঁচটি প্রকরণের সবগুলোর স্বকীয় অর্থনীতি, আদর্শ এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সমাজের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর |
নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক উভয় প্রকার শ্রেণিকরণের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এ্যান্থনী (Anthony Giddens) তাঁর ‘A Contemporary Critique of Historical Materialism’ (1981) গ্রন্থে সমাজকে সাতটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। সেগুলো হলো:
১. ক্ষুদ্র সংঘবদ্ধ সমাজ (Band Societies),
২. স্থায়ী কৃষিভিত্তিক সমাজ (Settled Agricultural Societies),
৩. নগর রাষ্ট্রভিত্তিক সমাজ (City State Societies),
৪. সাম্রাজ্য (Empires),
৫. সামন্তবাদী সমাজ (Feudal Societies),
৬. পুঁজিবাদী সমাজ (Capitalist Societies),
৭. সমাজতান্ত্রিক সমাজ (Socialistic Societies).
ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেনসার (Herbert Spencer) জীববিজ্ঞানী Darwin দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবের বিবর্তনের আলোকে সমাজের বিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করেছেন এবং সমাজকে নিম্নোক্ত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন:
১. সরল সমাজ (Simple Society): এটি সমাজের অতি আদি স্তর। এ সমাজে কোন শ্রেণিভেদ বা সামাজিক বৈষম্য ছিল না। এটি ছিল পরিবারকেন্দ্রিক সমাজ।
২. জটিল সমাজ (Compound Society): এটি গোত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থা এবং সমাজ কিছুটা জটিল।
৩. দ্বৈত জটিল সমাজ (Doubly Compound Society): এখানে সমাজ আরো জটিল রূপ লাভ করে। এ সমাজব্যবস্থা অনেকটা রাজতান্ত্রিক এবং এখানে City State Kingdom গড়ে উঠে।
৪. ত্রয়ী জটিল সমাজ (Trebly Compound Society): এটি সমাজব্যবস্থার সর্বাপেক্ষা জটিল রূপ। এখানে সাম্রাজ্য ও জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠে।
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) তাঁর The Rules of Sociological Methods’ গ্রন্থে সমাজকে চারভাগে ভাগ করেছেন:
১. সরল বা যুথবদ্ধ সমাজ (Simple or Hard Society).
২. সরল বহুমুখী সম্পর্কভিত্তিক সমাজ (Simple Polysegmentary Society),
৩. সাধারণ জটিল বহুমুখী সম্পর্কভিত্তিক সমাজ (Simple Compound Polysegmentary Society).
৪. দ্বৈত জটিল বহুমুখী সম্পর্কভিত্তিক Polysegmentary Society). সমাজ (Doubly Compound
উপরে মানবসমাজ বিকাশের ধারাকে বিভিন্ন তাত্ত্বিকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন। তবে একথা সত্য যে, সমাজের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তথাপি প্রথমোক্ত ছয়টি প্রকরণ নিয়েই আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা সমাজ কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারলেন। লেখাটি থেকে উপকৃত হলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন।
1 comment
[…] সমাজ কত প্রকার ও কি কি? […]
Comments are closed.