টোটেম
টোটেম মানে কি? কেউ কেউ বলেন, টোটেম শব্দটি অ্যালগনকুইন (Alganquin) উপজাতির ব্যবহৃত ‘Otam’ শব্দ হতে উৎপন্ন। এর অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন। এ প্রতীক কোন প্রাণীর হতে পারে, বৃক্ষাদির হতে পারে, কোন জড়বস্তুরও হতে পারে। কোন কোন আদিম জাতির বিশ্বাস তারা এসব টোটেম হতে উদ্ভূত এবং এ টোটেম তাদের বিশেষ যত্ন, শ্রদ্ধা এমনকি পূজার অধিকারী।
এ প্রতীকটির সাথে মানুষের সম্পর্ক বুঝানোর জন্য ‘আমার ওটেম’, ‘তোমার ওটেম’- এভাবে ব্যবহার হয়। সাধারণত একটি পারিবারিক বা কৌমের প্রতীক, যার সাথে সেই পরিবারের বা কৌমের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়।
রিভার্সের (Rivers) মতে, পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা অধিকসংখ্যক কৌমই টোটেমভুক্ত। এসব কৌমভুক্ত ব্যক্তির ধারণা যে, তারা কোন বিশেষ পশু, লতা বা জড় পদার্থের সাথে উল্লিখিত সম্পর্কে সম্পর্কিত। এসব জীব বা বস্তুকেই ‘টোটেম’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
জে. জি. ফ্রেজারের (J. G. Frazer) ভাষায়, টোটেম হলো এক শ্রেণির বস্তুবিশেষ যাকে একজন বর্বর কুসংস্কার বলে সম্মান প্রদর্শন করে, সে বিশ্বাস করে যে, সেও তার গোত্রের সকল সদস্যের সঙ্গে তার টোটেমের বিশেষ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বিদ্যমান।
টোটেমের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ফ্রয়েড বলেন, টোটেম কি? সাধারণভাবে এ হলো একটি প্রাণী (তা সে ভক্ষ্য বা নিরাপদ অথবা বিপজ্জনক বা আতঙ্কজনক হোক না কেন) এবং কদাচিৎ তা গাছপালা বা প্রাকৃতিক বস্তু (যেমন- বৃষ্টি বা পানি) বা একটি সমগ্র উপজাতির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পার্কিত।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা |
ট্যাবু
ট্যাবু শব্দটা নৃবিজ্ঞানীগণ পলিনেশীয় ভাষা থেকে গ্রহণ করেছেন। ট্যাবু বলতে বুঝায় নিষিদ্ধ। পলিনেশীয়রা অনেক কিছু উচিত মনে করেন না, ভাবে এসব করলে তাদের ক্ষতি হবে। কিন্তু কিভাবে এবং কেন ক্ষতি হবে, সে সম্পর্কে তারা কিছু বলতে পারে না। এ ধরনের নিষিদ্ধ ব্যাপারকেই বলা হয় ট্যাবু। এটি শুধু পলিনেশীয়দের মধ্যেই দেখা যায় না, পৃথিবীর আরো অনেক দেশেই দৃষ্টিগোচর হয়।
নৃবিজ্ঞানী ম্যারেট ও ফ্রেজার (Marret and Frazer) এর মতে, “ট্যাবু হচ্ছে বর্বর যুগের ধর্ম বিশ্বাসের অঙ্গ এবং বস্তুর অন্তর্নিহিত নৈর্ব্যক্তিক অতিপ্রাকৃত শক্তি ও বিধি-নিষেদের সম্পর্ক।”
ম্যাথু আরনল্ড (M. Arnold) এর মতে, “Taboo is the oldest human unwritten code of law.” অর্থাৎ, ট্যাবু হচ্ছে প্রাচীনতম মানবগোষ্ঠীর একটি অলিখিত বা আদি সংবিধান।
বস্তুত কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অস্পৃশ্য বা অপবিত্র মনে করে পরিহার বা নিষিদ্ধ করার প্রথাকেই ট্যাবু বলা হয়। আদিম অশিক্ষিত সমাজের লোকেরা মনে করতো এ ট্যাবু প্রথা না থাকলে তাদের ভয়ানক ক্ষতি হবে এবং এ প্রথা মেনে না চললে জীবনে অমঙ্গল হবে। কেননা তারা মনে করতো এ হচ্ছে এক অশরীরী শক্তির নির্দেশ। আমাদের বর্তমান শিক্ষিত সমাজেও এ প্রথার প্রচলন লক্ষ করা যায়। যেমন- হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। কেননা তাদের ধর্মে গরুকে মাতৃতুল্য দেবী বলে সম্মান দেয়া হয়ে থাকে। আবার মুসলমানদের মধ্যে শূকর খাওয়া নিষিদ্ধ।