6
ভেষজশাস্ত্রে ঔষধি গাছ হিসাবে আর্জুনের ব্যবহার অগনিত। বলা হয়ে থাকে, বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর এক জন ডাক্তার থাকা একই কথা। এর ঔষধি গুন মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই। শরীরের বল ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত রাখতে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ও বেদ-সংহিতায়। তার পর যত দিন যাচ্ছে ততই অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাবিত হচ্ছে। আজকের লেখায় আমরা অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা, ব্যবহার ও ঔষধি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা
- যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নাই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মি লি জল এর সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকেলবেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায়। তবে পেটে যাতে বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- অর্জুন ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয়, হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা বাড়ে। এটি রক্তের কোলেষ্টরল কমায় এবং ফলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বিচূর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারসিরোসিসের টনিক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
- অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে, এ টানিন মুখ, জিহ্বা ও মাঢ়ীর প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়। এটি মাঢ়ীর রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষত, খোস পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়।।
- অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথ্যা, প্রদর ইত্যাদি চিকিৎসায়ও উপকারী।
- এটি সংকোচ ও জ্বর নিবারক হিসাবেও কাজ করে।
- এ ছাড়া অর্জুনে saponin রয়েছে, একটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়। তাই চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যাবহৃত হয়। যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুনের ছালের রস ব্যাবহার হয়।
- অর্জনের ছালে essential oil রয়েছে তাই অর্জন খাদ্য-হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যাতন্ত্রের ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধকারী gallic acid, ethy gallae ও lutenolin রয়েছে অর্জুন ছালে। এ কারনে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাহারের সুযোগ রয়েছে।
অর্জুনের ঔষধী ব্যবহার
উদ্ভিদের নাম: অর্জুন।বৈজ্ঞানিক নাম: Terminalla Arjun Beddস্থানীয় নাম: অর্জুন।হৃদরোগ: অর্জুনের ছাল ভালভাবে পিষে চিনি ও গরুর দুধের সাথে প্রতিদিন সকালে বছরকাল খেলে যাবতীয় হৃদরোগ সেরে যায়। তবে বিশেষ রোগীদের ক্ষেত্রে সেবন পদ্ধতি হলো দেড় পোয়া পানি, আধা পোয়া গরুর দুধ এবং দুই তোলা আর্জুন ছালের গুড়ো একত্রে জ্বাল দিয়ে আধ পোয়া পরিমাণ করতে হবে এর পর নামিয়ে ফেলে ছেকে নিতে হবে। ছেকে নেওয়ার ফলে যে ক্বাথ তৈরী হবে তা হৃদরোগে সেবন করা হয়। সকালে খালি পেটে খেতে হয়।ব্যবহার্য্য অংশ: প্রধানত ছাল (পরিণত গাছের) তবে পাতা এবং ফলও ব্যবহত হয়।ভেষজ নাম: অর্জুন।রোপণের সময়: অর্জুন বৃক্ষ সাধারণত লাগান হয়ে থাকে। নার্সারী থেকে চারা এনে সহজেই জন্মান যায়।উত্তোলণের সময়: অর্জুন গাছ ৫০ থেকে ৬০ ফুট উচু হয়ে থাকে। অর্জুন গাছ প্রাপ্ত বয়ষ্ক হলে এর ছাল তুলতে হয়।আবাদী/অনাবাদী/বনজ: এটি আবাদী উদ্ভিদ।চাষাবাদের ধরণ: নার্সারী থেকে চারা এনে সহজেই জন্মান যায়।উদ্ভিদের ধরণ: বৃক্ষ।ঔষধি গুণাগুণ: হৃদরোগ, রক্তঅর্শ, উদারাময় ও রক্তআমাশয়, রক্তপিত্ত, লো-ব্লাডপ্রেসার, হাড় ভাঙ্গা, ব্যাথা, মেচতা, মূত্র অবরোধ, ক্ষয়কাস, কান ব্যাথা, হৃতপিন্ডের ধরফড়ানি, দূরবলতা, ইত্যাদী রোগের উপকার হয়ে থাকে।ব্যবহার:রক্তঅর্শ, উদারময় ও রক্তআমাশয়: এক ভাগ অর্জুনের ছাল আধসের পানিতে জ্বাল দিয়ে যে ক্বাথ তৈরী হয় তা আধা আউন্স মাত্রায় খেলে রক্তঅর্শ, উদারময় ও রক্তআমাশয় ভাল হয়।হাড় ভাঙ্গা: কোন স্থানে ভেঙ্গে গেলে সেই স্থানে অর্জুন গাছের ছাল ও রসুন বেটে প্লাষ্টার করলে হাড় ভাঙ্গা জোড়া লেগে যায়। সন্ধি হাড় ভেঙ্গে গেলে দুধ ও ঘি এর সাথে অর্জুন ছালেন গুড়ো খেলেও উপকার হয়ে থাকে।ব্যাথা: অর্জুন ছালের গুড়ো দুধের সাথে খেলে আঘাত জনিত ব্যাথা ভাল হয়।মেচতা: অর্জুন ছাল মধুর সাথে পিষে প্রলেপ দিলে মেচতা রোগ সেরে যায়।মূত্র অবোরোধ: কোন কারনে মূত্র অবোরোধ হলে অর্জুন ছালের ক্বাথ পান করলে মূত্র অবরোধ সেরে যায়।ক্ষয়কাস: বাসক পাতার রস ও মধুর সাথে অর্জুন ছালের গুড়ো খেলে ক্ষয়কাস সেরে যায়।
আশাকরি, উপরের তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা থেকে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অনেককিছু জানতে সক্ষম হয়েছেন। এরকম আরও ভেষজ উদ্ভিদের গুণাগুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ব্লগের সাথেই থাকুন।
আরও পড়ুন: কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও ভেষজ গুণ