এমিল ডুর্খেইম এর পরিচয় বর্ণনা
এমিল ডুর্খেইম উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের লোরেইন প্রদেশের অন্তর্গত ‘এপিনাল’ নামক একটি গ্রামে এক ইহুদি পরিবারে ১৮৫৮ সালের ১৫ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন ইহুদি রাব্বী ছিলেন। রাব্বী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি অল্প বয়সেই রাব্বী হয়ে যান। যখন তাঁর বয়স মাত্র তের, তখনই তিনি পুরোপুরি ইহুদি ধর্মের অনুগামী হন। এ সময় একজন ক্যাথলিক মহিলা শিক্ষিকার সংস্পর্শে এসে অতিন্দ্রীয়বাদী প্রভাবে সাময়িকভাবে ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। তবে অনতিবিলম্বে তিনি সবরকম ধর্মীয় সংযোগ সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং পারিবারিক ঐতিহ্য প্রত্যাখ্যান করে একজন অজ্ঞেয়বাদীতে (Agnotic) পরিণত হন।
ডুর্খেইম আজীবন ধর্ম সম্পর্কিত শিক্ষার প্রতি আগ্রহশীল ছিলেন বটে, কিন্তু ধার্মিক হিসেবে নয়। অর্থাৎ, অধিবিদ্যাগত নয়, একাডেমিক। সমকালীন ফ্রান্সের স্বনামধন্য উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইকোলি নরম্যালি সুপিরিয়র (Ecoleormale superieure) থেকে দর্শনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: অগাস্ট কোঁৎ এর পরিচয় এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহ
১৮৮২ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসের বিভিন্ন প্রাদেশিক স্কুলে দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। এ সময়ে জার্মান ভাষাভাষী বিভিন্ন সমাজতত্ত্ববিদদের কাজকর্মের উপর বেশ কিছু সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এর ফলে তিনি সামাজিক দার্শনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৮৮৭ সালে তিনি বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Bordeaux) অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯০২ সালে বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্যারিসের সোঁরবো (Sorbonne) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ‘Charge de course’ হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর ১৯০৬ সালে সমাজতত্ত্ব ও শিক্ষা বিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯১৩ সালে তাঁর পদটি কেবলমাত্র সমাজতত্ত্বের অধ্যাপকের পদ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তিনি আমৃত্যু সেখানে অধ্যাপনা করেন।
বোঁরদো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই ডুর্খেইম লুই ড্রাইফ্রাস (Louise Dreyfus) নামে ঐতিহ্যবাদী এক ইহুদি পরিবারের মহিলাকে বিয়ে করেন। ডুর্খেইমের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে তাঁর দুই সন্তান ছিল নাম- মেরী (Marie) ও আঁন্দ্রে (Andre)। তাঁর একমাত্র পুত্র আঁদ্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বুলগেরিয়ার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এই চরম দুঃসংবাদটি ডুর্খেইম জ্ঞাত হন ১৯১৫ সালের বড়দিনের ঠিক আগে। পুত্রের এই চিরবিয়োগ ব্যাথা এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাঁর অনেক মেধাবী ছাত্র, সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-পরিজনের প্রাণ হারানোর শোক তাঁকে মানসিক যন্ত্রণায় হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। এর বছর দু’য়ের মধ্যেই ঊনষাট বছর বয়সে ১৯১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর এমিল ডুর্খেইম পরলোক গমন করেন।