Home » জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর

জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর

by Rezaul Karim
জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর, জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি,

জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ

যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় আয় গণনা বা হিসাব করা হয় সেগুলোকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি বলা হয়।

জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি প্রধানত তিনটি। যথা-

১. উৎপাদন পদ্ধতি (Product Method),

২. আয় পদ্ধতি (Income Method) ও

৩. ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Method)।

নিচে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ ব্যাখ্যা করা হলো-

১. উৎপাদন পদ্ধতি (Product Method)

একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আর্থিক মূল্যের সমষ্টিকে বলা হয় উৎপাদন পদ্ধতিতে জাতীয় আয়। যেমন- কোনো দেশে n সংখ্যক উৎপাদন ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্য যথাক্রমে x1, x2…..xn, এবং বাজার দাম যথাক্রমে P1, P2…..Pn হলে, উৎপাদন পদ্ধতিতে জাতীয় আয় হবে, Y = p1x1 + p2x2+…+ PnXn

মোট জাতীয় উৎপাদন ও মোট দেশজ উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য

উৎপাদন পদ্ধতি অনুসারে জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সতর্কতাসমূহ অবলম্বন করতে হয়।

সতর্কতা:

১. এ পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য থেকে পরোক্ষ কর বাদ দিতে হবে। 

২. বিনিময় মূল্য নেই এরকম দ্রব্য ও সেবাকর্ম জাতীয় আয়ে হিসাব করা হয় না।

৩. জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবাকর্মের আর্থিক মূল্য গণনা করতে হবে।

৪ . এ পদ্ধতিতে GNP থেকে ক্ষয়ক্ষতিজনিত ব্যয় CCA বাদ দিতে হবে।

৫. মুদ্রাস্ফীতির সময় দাম বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত মুনাফা এবং মুদ্রা সংকোচনের সময় দাম হ্রাসের ফলে লোকসান এ পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপে গণনা করা যাবে না।

৬. অবৈধ পণ্য ও সেবায় আর্থিক মূল্য জাতীয় আয় গণনায় হিসাব করা যাবে না।

২. আয় পদ্ধতি (Income Method)

একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) একটি দেশের উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত উপকরণসমূহ থেকে প্রাপ্ত আয়ের সমষ্টিকে আয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় বলা হয়। সাধারণত উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ হচ্ছে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন এবং ব্যবহৃত উপকরণ থেকে প্রাপ্ত আয় হচ্ছে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা। আর এ অর্জিত আয়ের সমষ্টিই হলো জাতীয় আয়।

Y = r + w + i + n – Tp.

এখানে,

Y = জাতীয় আয়

r = খাজনা

w = মজুরি

i = সুদ

x = মুনাফা 

Tp = হস্তান্তর পাওনা

আয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর সতর্ক থাকতে হবে।

সতর্কতা:

১. জাতীয় আয় হিসাবের ক্ষেত্রে হস্তান্তর পাওনা বাদ দিতে হয়। এক্ষেত্রে হস্তান্তর পাওনাসমূহ যেমন- বয়স্ক ভাতা, বেকার ভাতা, বিধবা ভাতা, অবসর ভাতা ইত্যাদি বাদ দিতে হয়।

২. যৌথ মূলধনী কারবারে মুনাফার যে অংশ অবণ্টিত থাকে তা জাতীয় আয়ের হিসাবে যোগ করতে হবে।

৩. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিট রপ্তানি (X – M) জাতীয় আয় হিসাবে যোগ করতে হবে।

৪. বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজ যাদের আর্থিক মূল্য নেই, যেমন- আয়ার কাজ, মাতৃসেবা ইত্যাদি জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

৫. অসৎ উপায়ে উপার্জিত আয় যেমন- (ঘুষ, সুদ ইত্যাদি) টাকা জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

মোট দেশজ উৎপাদন কাকে বলে | মোট জাতীয় উৎপাদন কাকে বলে

৩. ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Method)

একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) একটি দেশের সকল নাগরিকের সবধরনের ব্যয়ের সমষ্টি হচ্ছে ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয়। যেমন- ভোগ ব্যয় (C) এবং বিনিয়োগ ব্যয় (I)। সুতরাং ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় হচ্ছে Y = C + I। সরকারি ব্যয় যুক্ত হলে জাতীয় আয় হচ্ছে

Y = C + I + G।

এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিট রপ্তানি (X – M) যুক্ত হয় তবে জাতীয় আয় হবে

Y = C + I + G + (X – M)।

ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

সতর্কতা:

১. অনুৎপাদনশীল কাজের জন্য সরকার যে সুদ প্রদান করে তা ব্যয় পদ্ধতিতে জাতীয় আয় পরিমাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

২. বিনাশ্রমে প্রাপ্ত দ্রব্য ও সেবা জাতীয় আয় গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

৩. হস্তান্তর পাওনা যেমন- বেকার ভাতা, পেনশন, রিলিফ ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।

৪. জাতীয় ব্যয় থেকে পরোক্ষ কর বাদ দিতে হবে।

৫. অবচয়জনিত ব্যয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে বাদ দিতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতিই গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে সকলের পরিমাপ একই রকম হওয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশে কিছু ত্রুটির কারণে পার্থক্য দেখা দিতে পারে।

Related Posts