বিবাহ কত প্রকার?
বিভিন্ন সমাজে এবং অনেক সময় একই সমাজে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত রীতিনীতি এবং আচার–অনুষ্ঠানে পার্থক্য দেখা যায়। আজকের আলোচনায় বিবাহ কত প্রকার সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
সমাজবিজ্ঞানীগণ নিম্নোক্তভাবে বিবাহকে ভাগ করেছেন। যথা-
১. পতি বা পত্নীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিবাহকে দু‘প্রকারে ভাগ করা যায়। যেমন– একপতি–পত্নীক বিবাহ (Monogamy) ও বহুবিবাহ (Polygamy)।
ক. যখন একজন পুরুষ একজন নারীকে নিয়ে দাম্পত্য জীবনযাপন করে তখন তাকে একপতি–পত্নীক বিবাহ (Monogamy) বলে।
খ. আবার যখন পুরুষ বা নারী এককালে একাধিক লোকের সাথে দাম্পত্য জীবনযাপন করে, তখন তাকে বহুবিবাহ (Polygamy) বলে। বহুবিবাহ (Polygamy) আবার তিন প্রকার। যথা :
- একজন নারী যখন বহু স্বামী গ্রহণ করে তখন তাকে বহুপতি বিবাহ (Polyandry) বলে।
- একজন পুরুষ যখন বহু স্ত্রী গ্রহণ করে তখন তাকে বহুপত্নীক বিবাহ (Polygamy) বলে।
- যখন একাধিক পুরুষের একাধিক স্ত্রীলোকের সঙ্গে একই কালে বিবাহ হয় তখন এ প্রকার বিবাহকে গোষ্ঠী বিবাহ (Group marriage) বলে।
২. পাত্র–পাত্রী নির্বাচন করার ভিত্তি কি হওয়া উচিত সে পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহকে দু‘ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : স্বগোত্র বা অন্তর্বিবাহ (Endogamy) ও বহিগোত্র বা অসবর্ণ বিবাহ (Exogamy)।
ক. যখন একই গোত্র হতে পাত্র এবং পাত্রী উভয়ের নির্বাচন সংগত বিধি বলে গণ্য হয়, তখন তাকে স্বগোত্র বা অন্তর্বিবাহ (Endogamy) বলে।
খ. যখন একই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কাউকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করা হয় এবং দুটি ভিন্ন গোষ্ঠী হতে উভয়ের নির্বাচন সংগত বলে বিবেচিত হয়, তখন এ প্রকার বিবাহকে বহির্গোত্র বা অসবর্ণ বিবাহ (Exogamy) বলে।
আরও পড়ুন: বিবাহ কাকে বলে অথবা বিবাহের সংজ্ঞা
৩. বিবাহ বন্ধনের ফলে সামাজিক মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহকে দু‘প্রকারে ভাগ করা হচ্ছে। যথা :
ক. উচ্চ বংশের পাত্রের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর কন্যার বিবাহকে অনুলোম বিবাহ (Hypergamy) বলে।
খ. নিম্ন বংশজাত পাত্রের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত উচ্চ শ্রেণির কন্যার বিবাহকে প্রতিলোম বিবাহ (Hypogamy) বলে।
৪. পাত্র–পাত্রীর মধ্যে বয়স, শিক্ষা, রুচি, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি নানা বিষয়ে সমতা এবং অসমতার ভিত্তিতে বিবাহকে দু‘প্রকারে ভাগ করা, হয়েছে। যথা:
ক. পাত্র–পাত্রীর মধ্যে যখন এ বিষয়গুলোর সমতা পরিলক্ষিত হয়, সে বিবাহকে সমবিবাহ (Homogamy) বলে।
খ. পাত্র–পাত্রীর মধ্যে যখন উপর্যুক্ত বিষয়ে অসমতা পরিলক্ষিত হয়, তখন সে বিবাহকে অসমবিবাহ (Heterogamy) বলে।
৫. বিবাহের পাত্রপাত্রীকে কিভাবে মনোনীত করা হয় সে পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহকে দু‘ভাগে ভাগ করা হয়। যথা–
ক. পাত্র বা পাত্রী যখন নিজে জীবন সাথীকে মনোনীত করে তখন তাকে স্বনির্বাচিত বিবাহ (Romantic marriage) বলে।
খ. যদি অভিভাবক বা আত্মীয় স্বজন দ্বারা পাত্র–পাত্রী মনোনয়ন করে বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়, তখন এ ধরনের বিবাহকে সংযোজিত বিবাহ (Arranged marriage) বলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিবাহ হচ্ছে একজন পুরুষ ও মহিলার সমাজ স্বীকৃত একটি যুগল বন্ধন যার মাধ্যমে পরিবার সমাজে স্বীকৃতি লাভ করে এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ–কাল–পাত্রভেদে বিবাহের বিভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হলেও একথা সত্য যে, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে অধিকাংশ সমাজেই একক বিবাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তো বিবাহ কত প্রকার সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেলাম। আশাকরি, লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরও লেখা পেতে অবশ্যই ব্লগটির সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।