মাত্রাগত উৎপাদন কি বা কাকে বলে?
দীর্ঘকালে সকল উপাদান পরিবর্তনযোগ্য। মাত্রাগত সম্পর্কের (scale relationships) ফলাফল থেকে মাত্রাগত উৎপাদন বিধির উৎপত্তি ঘটে। সকল উপাদানকে একই অনুপাতে বা বিভিন্ন অনুপাতে পরিবর্তন ঘটিয়ে দীর্ঘকালে উৎপাদন বাড়ানো যায়। সকল উপাদান একই অনুপাতে পরিবর্তিত হলে উৎপাদনের ওপর তার যে প্রভাব পড়ে এবং সেই প্রভাব যে উৎপাদন অপেক্ষকে বিবেচিত হয়, সেই উৎপাদন অপেক্ষককে হোমোজেনাস উৎপাদন অপেক্ষক বলে।
উপাদানগুলো বিভিন্ন অনুপাতে পরিবর্তিত হলে উৎপাদনের ওপর তার যে প্রভাব পড়ে, সেই প্রভাব যে উৎপাদন অপেক্ষকে বিবেচিত হয় সেই উৎপাদন অপেক্ষককে নন-হোমোজেনাস উৎপাদন অপেক্ষক বলে। প্রচলিত উৎপাদন তত্ত্বে (traditional theory of production) সকল উপাদানকে একই (নির্দিষ্ট) অনুপাতে পরিবর্তন করা হয়। সব উপাদান একই অনুপাতে পরিবর্তিত হলে উৎপাদনক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়, তাকে মাত্রাগত উৎপাদন বা ‘রিটার্নস টু স্কেল’ (returns to scale) বলে।
মাত্রাগত উৎপাদন কত প্রকার?
মাত্রাগত উৎপাদন তিন প্রকার। অর্থাৎ, উপাদানের মাত্রা পরিবর্তনের ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রে তিন ধরনের মাত্রাগত পরিবর্তন দেখা দেয়। যথা-
১. ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন,
২. স্থির বা সমানুপাতিক মাত্রাগত উৎপাদন ও
৩. ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন।
চিত্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রকার মাত্রাগত উৎপাদনের ব্যাখ্যা করা হলো-
১. ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন
উপাদানের মাত্রা যে হারে বাড়ে উৎপাদন তার চেয়ে অধিক হারে বৃদ্ধি পেলে, তাকে ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এর অর্থ হলো উপাদানের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়ানো হলে উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
জমির পরিমাণ | শ্রম ও মূলধন (L & K) | মোট উৎপাদন | প্রান্তিক উৎপাদন | |
শ্রম | মূলধন | |||
1 একর | 1 | 1 | 10 | 10 |
1 একর | 2 | 2 | 25 | 15 |
1 একর | 3 | 3 | 45 | 20 |
তালিকায় দেখা যায়,। একর জমিতে শ্রম ও মূলধনের বিভিন্ন সংমিশ্রণে মোট উৎপাদন ও প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।। একর জমিতে। একক করে শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে মোট উৎপাদন 10 এবং প্রান্তিক উৎপাদন 10 হয়। এখন ওই জমিতে শ্রম ও মূলধন নিয়োগ দ্বিগুণ করে 2 ও 2 একক করলে উৎপাদন হয় 25 একক। এক্ষেত্রে প্রান্তিক উৎপাদন হয় 15 একক। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মোট উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং দেখা যায়, শ্রম ও মূলধন যে হারে বৃদ্ধি পায় মোট উৎপাদন তার থেকে অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। তাই এটি ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত্ উৎপাদন প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন
মোট উৎপাদন, গড় উৎপাদন, প্রান্তিক উৎপাদন ও উৎপাদন বিধি ধারণা |
এ বিষয়টি নিচে সমউৎপাদন রেখার সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হলো-
চিত্রে ভূমি অক্ষে শ্রম এবং লম্ব অক্ষে মূলধনের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়েছে। EP, EP₂ ও EP, তিনটি সমউৎপাদন রেখা যথাক্রমে 10, 25 ও 45 একক উৎপাদন নির্দেশ করে।। একক শ্রম ও। একক মূলধন নিয়োগ করে 10 একক উৎপাদন পাওয়া যায়। এখন শ্রম ও মূলধন নিয়োগ দ্বিগুণ করে 2 একক ও 2 একক করলে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে 25 একক হয়, যা পূর্বের উৎপাদনের দ্বিগুণেরও বেশি। আবার শ্রম ও মূলধন আরও বৃদ্ধি করে 3 একক ও ও একক করা হলে মোট উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেয়ে 45 একক হয়। এ বিষয়টি নিচে তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়-
জমির পরিমাণ | শ্রম ও মূলধন (L & K) | মোট উৎপাদন | প্রান্তিক উৎপাদন | |
শ্রম | মূলধন | |||
1 একর | 1 | 1 | 10 | 10 |
1 একর | 2 | 2 | 20 | 10 |
1 একর | 3 | 3 | 30 | 10 |
তালিকায় দেখা যায়, 1 একর জমিতে 1 একক করে শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করলে মোট উৎপাদন 10 একক হয়। এখন উক্ত জমিতে শ্রম ও মূলধন দ্বিগুণ করে 2 একক করা হলে মোট উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে 20 একক হয়। আবার শ্রম ও মূলধন বৃদ্ধি করে ও একক করে দেওয়া হলে মোট উৎপাদন হয় 30 একক। এক্ষেত্রে প্রতি একক শ্রম ও মূলধন নিয়োগ বৃদ্ধিতে মোট উৎপাদন সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়, যা সমানুপাতিক বা স্থির মাত্রাগত উৎপাদন নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে উপাদান দ্বিগুণ নিয়োগের ফলে উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়ে অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত্ উৎপাদন নির্দেশ করে।
২. স্থির বা সমানুপাতিক মাত্রাগত উৎপাদন
উপাদানের মাত্রা যে হারে বাড়ে উৎপাদন সে হারে বাড়লে তাকে স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এর অর্থ হলো উপকরণের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়ানো হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি সমউৎপাদন রেখার সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন-
চিত্রে ভূমি অক্ষে শ্রমের পরিমাণ এবং লম্ব অক্ষে মূলধনের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্রে EP1, EP₂ এবং EP, তিনটি সমউৎপাদন রেখা যথাক্রমে 10, 20 ও 30 একক উৎপাদন নির্দেশ করে।। একক করে শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে মোট উৎপাদন হয় 10 একক। এখন শ্রম ও মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে যথাক্রমে 2 ও 3 একক করে নিয়োগ করা হলে মোট উৎপাদন সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে 20 একক ও 30 একক হয়, যা সমানুপাতিক বা স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বিধি প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে উপাদানের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়ানোর ফলে উৎপাদনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থির মাত্রাগত উৎপাদন নির্দেশ করে।
৩. ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন
উৎপাদানের মাত্রা যে অনুপাতে বাড়ে উৎপাদন তার চেয়ে কম হারে বাড়লে তাকে ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এর অর্থ হলো এই যে, উপাদানের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়ানো হলে উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়ে কম বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি নিচে তালিকার মাধমে প্রকাশ করা যায়-
জমির পরিমাণ | শ্রম ও মূলধন (L & K) | মোট উৎপাদন | প্রান্তিক উৎপাদন | |
শ্রম | মূলধন | |||
1 একর | 1 | 1 | 10 | 10 |
1 একর | 2 | 2 | 15 | 5 |
1 একর | 3 | 3 | 18 | 3 |
তালিকায় দেখা যায়, শ্রম ও মূলধন একক করে নিয়োগ করা হলে মোট উৎপাদন 10 একক হয়। এখন শ্রম ও মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে 2 একক ও ও একক করে নিয়োগ করা হলে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে 15 একক ও 18 একক হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, শ্রম ও মূলধন নিয়োগের পরিমাণ যে হারে পরিবর্তন করা হয় মোট উৎপাদন তার তুলনায় কম হারে পরিবর্তিত হয়, যা ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন নির্দেশ করে।
আরও পড়ুন
উৎপাদন অপেক্ষক কি | স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন উৎপাদন অপেক্ষক কি |
এ বিষয়টি সমউৎপাদন রেখার সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। চিত্রে ভূমি অক্ষে শ্রমের পরিমাণ এবং লম্ব অক্ষে মূলধনের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়েছে। EP, EP1 ও EP₂ হলো তিনটি সমউৎপাদন রেখা যারা যথাক্রমে 10, 15 ও 18 একক উৎপাদন নির্দেশ করে।
চিত্র অনুসারে ১ একক শ্রম ও ১ একক মূলধন নিয়োগ করে ১০ একক উৎপাদন পাওয়া যায়। আবার ২ একক শ্রম ও ২. একক মূলধন নিয়োগ করে ১৫ একক উৎপাদন পাওয়া যায়। আবার শ্রম ও মূলধন নিয়োগ ও একক করে হলে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ একক হয়। এক্ষেত্রে উপাদানের নিয়োগ যে হারে বাড়ানো হয় উৎপাদন তার চেয়ে কাম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন নির্দেশ করে।