লেনদেন
সাধারণভাবে লেনদেন বলতে অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আদান-প্রদানকে বুঝায়। লেনদেন শব্দটির দুটি অংশ রয়েছে, যথা- লেন ও দেন। লেন অর্থ গ্রহণ বা আদান এবং দেন অর্থ প্রদান। কাজেই লেনদেন্ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো গ্রহণ ও প্রদান।
হিসাববিজ্ঞানী এল.সি. ক্রুপার লেনদেনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “অর্থের আদান-প্রদান বা অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হলে উক্ত আদান-প্রদানকে লেনদেন বলে।”
Prof. H. Banarjee এর মতে, The dealings of a trader in regard to money’s or money’s worth are called his transaction, অর্থাৎ, অর্থ বা অর্থের মূল্যে পরিমাপযোগ্য কারবারি আদান-প্রদানকে লেনদন বলা হয়।
প্রকৃতপক্ষে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এরূপ যেকোনো ঘটনাকে লেনদেন্ বলা হয়। যেমন- মাল ক্রয়, মাল বিক্রয়, বেতন প্রদান, মজুরি পরিশোধ প্রভৃতি।
মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা আলোচনা কর |
আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীগণ হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে লেনদেন বিবেচনা করে থাকেন। হিসাব সমীকরণটি হলো A= L + OE এখানে A = মোট সম্পদ (Assets), L= পাওনাদারের দাবি বা অধিকার (Liabilities) এবং OE = মালিকানাস্বত্ব (Owner’s Equity), হিসাব সমীকরণের ভিত্তিতে লেনদেন্ বলতে বুঝায়- যেসব ঘটনার মাধ্যমে হিসাব সমীকরণের উপাদান যথা- সম্পত্তি, দায় বা মালিকের স্বত্বাধিকারে পরিবর্তন ঘটে সেসব ঘটনাকে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি অর্থের মাপকাঠিতে নিরূপিত বা নির্ধারণযোগ্য দ্রব্যসামগ্রী অথবা সেবাকর্মের আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হলে উক্ত আদান-প্রদানকে লেনদে্ন বলে।
ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে পার্থক্য
সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়। তাই ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নিচে পার্থক্য গুলো আলোচনা করা হলো-
পার্থক্যের বিষয় | ঘটনা | লেনেদেন |
১। ব্যাপকতা | ঘটনার ব্যাপকতা অনেক বিস্তৃত এবং এটি বিভিন্ন অর্থবোধক হতে পারে। | লেনদেন্ বিষয়টি অনেকটা সুনির্দিষ্ট এবং এর ব্যাপকতা তুলনামূলকভাবে কম। |
২। দুই পক্ষ | ঘটনার জন্য দুটি পক্ষের প্রয়োজন হয় না। | লেনদেন হতে হলে অবশ্যই দুই পক্ষের বা খাতের প্রয়োজন হয়। |
৩। অর্থ দ্বারা পরিমাপক | ঘটনা দ্বারা আর্থিক অবস্থায় পরিবর্তন হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। | লেনদেনে সবসময়ই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। |
৪। প্রমাণক | ঘটনার জন্য তার সমর্থনে কোনো প্রমাণ পত্রের প্রয়োজন পড়ে না। | লেনদেনের সমর্থনে সবসময়ই প্রমাণপত্র সংরক্ষণ বাঞ্ছনীয়। |
৫। প্রকৃতি | সকল ঘটনা লেনদেন না। | সকল লেনদেনই ঘটনা। |
৬। হিসাবরক্ষণ | ঘটনারা দ্বারা হিসাবরক্ষণ করা হয় না। | লেনদেন্ দ্বারা হিসাবরক্ষণ করা হয়। |
৭। লাভ-ক্ষতি নির্ণয় | ঘটনা ব্যবসার লাভ-ক্ষতি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় না। | লেনদেন দ্বারা ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা হয়। |
৮। শ্রেণিবিভাগ | ঘটনার দুটি শ্রেণি হয়- ক) আর্থিক এবং খ) অনার্থিক। | লেনদেনের অনেক শ্রেণি হয়ে থাকে। |
৯। হিসাব-নিকাশ | আর্থিক ঘটনা দ্বারা হিসাব-নিকাশ এককের আর্থিক অবস্থা বদলে দেয় না। | লেনদেন সবসময়ই হিসাব-নিকাশ এককের আর্থিক অবস্থা বদলে দেয়। |
উপর্যুক্ত আলোচনা হতে এটি স্পষ্ট, ঘটনা এবং লেনদেন দুটি বিষয় একই প্রকৃতির হলেও বাস্তবে তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
হিসাবরক্ষণ ও হিসাববিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর |