লেনদেনের বৈশিষ্ট্য
সকল লেনদেনই ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনাই লেনদেন নয়। যেসব ঘটনাকে লেনদেন বলে গণ্য করা হয় তাদের কতগুলো বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। নিচে লেনদেনের এই বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করা হলো-
১. আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন
কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে তার দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। যেমন, ৫০০.০০ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো। ফলে কারবারের স্থায়ী সম্পত্তি ৫০০.০০ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নগদ ৫০০.০০ টাকা হ্রাস পেয়েছে। তাই এটি একটি লেনদেন।
লেনদেন কাকে বলে? ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর |
২. অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য
লেনদেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা অবশ্যই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে। যে সকল ঘটনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য নয় তাদের লেনদেন বলে গণ্য করা হয় না। যেমন, A এর নিকট ৫,০০০.০০ টাকা মূল্যের পণ্য বিক্রয় করা হলো। এটি একটি লেনদেন; কারণ এটি টাকার দ্বারা পরিমাপযোগ্য।
৩. দ্বৈতসত্তা
প্রতিটি লেনদেনের অবশ্যই দুটি পক্ষ বা হিসাবখাত থাকবে। এদের একটি ডেবিট পক্ষ এবং অন্যটি ক্রেডিট পক্ষ। দুটি পক্ষ ছাড়া লেনদেন হয় না। লেনদেনের এই বৈশিষ্ট্যকে তার দ্বৈতসত্তা বলে। যেমন- জনাব ক তার তার কারবারের জন্য ২,৫০০.০০ টাকার পণ্য নগদে ক্রয় করে। এ ঘটনাটি একটি লেনদেন। কারণ এ ঘটনার সাথে দুটি পক্ষ জড়িত। একটি মাল ক্রয় এবং অপরটি নগদ টাকা।
৪. স্বয়ংসম্পূর্ণ ও যন্ত্র
লেনদেন হতে হলে প্রতিটি ঘটনাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র হতে হবে। অর্থাৎ একটি লেনদেনের সাথে অপর একটি লেনদেনের সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু দুটিকে এক ধরা যাবে না। একটি অবশ্যই অপরটি হতে আলাদা এবং স্বতন্ত্র হতে হবে। ধরা যাক, সুমন বাকিতে ২,০০০.০০ টাকার পণ্য সুজনের নিকট হত ক্রয় করে এক মাস পর তার মূল্য পরিশোধ করেছে। এখানে দুটি ঘটনা বিদ্যমান। একটি বাকিতে পণ্য ক্রয় এবং অন্যটি একমাস পর মূল্য পরিশোধ। যদিও ঘটনা দুটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত তথাপি তাকে একটি লেনদেন বলে গণ্য করা যাবে না। কারণ দুটি ঘটনাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র।
৫. অদৃশ্যমান
কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে সবসময়ই দৃশ্যমান হতে হবে এমন নয়। তা অনেক সময় অদৃশ্যমানও হতে পারে। যেমন- একজন ব্যবসায়ী ব্যবসায়ের জন্য ৫০,০০০.০০ টাকায় একটি মেশিন ক্রয় করে। উক্ত মেশিন উৎপাদনকার্যে এক বছর ব্যবহৃত হলো। এক বছর পর তার মূল্য ১০% বা ৫,০০০.০০ টাকা হ্রাস পেল। এই মূল্য হ্রাসকে অবচয় বলে। অবচয়ের এই ৫,০০০.০০ টাকা ব্যবসায়ের ক্ষতি। কিন্তু এই ঘটনা দৃশ্যমান নয়। এই ঘটনাটি অদৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও এটি একটি লেনদেন।
৬. হিসাব সমীকরণের উপাদানের পরিবর্তন
আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীগণ লেনদেনকে হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে বিচার করে থাকেন। হিসাব সমীকরণটি হলো A = L + OE. এখানে A = সম্পত্তি L = পাওনাদারদের দাবি বা অধিকার এবং OE = মালিকানাস্বত্ব বা মূলধন। যেসব ঘটনা দ্বারা হিসাব সমীকরণের উপাদানের পরিবর্তন ঘটে, সেসব ঘটনাকে লেনদেন বলে।
যেমন- হাসান নগদে ৮,০০০.০০ টাকার মাল বিক্রয় করে। এ ঘটনার জন্য A=L+ OE সমীকরণের A পরিবর্তন ঘটে বিক্রয়জনিত নগদ অর্থ প্রাপ্তি/বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং OE পরিবর্তন ঘটে বিক্রয়জনিত আয়ের জন্য। তাই এটি একটি লেনদেন।
মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা আলোচনা কর |
৭. হিসাব নিকাশের ভিত্তি
হিসাব-নিকাশের দুটি ভিত্তি বিদ্যমান, যথা নগদানভিত্তিক ও বকেয়াভিত্তিক। নগদ টাকা আদান- প্রদানের মাধ্যমে যে লেনদেন সংঘটিত হয়, তাকে নগদভিত্তিক লেনদেন বলে। আর দেনা-পাওনা সংক্রান্ত লেনদেনকে বকেয়াভিত্তিক লেনদেন বলে। তাই কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে তা হিসাব-নিকাশের ভিত্তির উপর নির্ভরশীল হতে হবে। লেনদেন উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি পর্যালোচনা হতে বলা যায়, কোনো ঘটনা লেনদেন হতে হলে তাতে উপর্যুক্ত কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্য অবশ্যই বিদ্যমান থাকতে হবে। নতুবা কোনো ঘটনাকে লেনদেন বলে বিবেচনা করা যাবে না।