শ্রম
উৎপাদনের একমাত্র জীবন্ত উপকরণ হলো শ্রম। সাধারণ অর্থে শ্রম হলো মানুষের শারীরিক বা দৈহিক পরিশ্রম। কিন্তু অর্থনীতিতে উৎপাদনে নিয়োজিত মানুষের যে দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক বা দাম দেওয়া হয়, তাকে শ্রম বলে। পরিচালনার কাজও শ্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। মিলের ঝাড়ুদার ও মিলের ম্যানেজারের * শ্রম অর্থনীতিবিদদের নিকট সমপর্যায়ভুক্ত। চোর বা ভিক্ষুকের শ্রম উপযোগ সৃষ্টি করে না বলে তা শ্রম নয়। তবে নাচ বা খেলাধুলা প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জন করলে তা পরিশ্রমের শ্রম হবে।
অধ্যাপক নিকোলসন (Nicholson)-এর মতে, “শ্রম বলতে সব ধরনের উন্নত পেশাগত দক্ষতা এবং অদক্ষ শ্রমিক ও কারিগরদেরকে বোঝায় যারা শিক্ষা, শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, বিচার-প্রশাসন ও সরকারের সকল শাখায় নিয়োজিত।” (Labour includes the very highest professional skill of all kinds, as well as the labour of unskilled workers and artisan and of those employed in education, in the fine arts, in literature, in science, in the administration of justice and in government’s in all its branches.)
ফার্ম ও শিল্পের মধ্যে পার্থক্য কি? |
অধ্যাপক Roy J. Ruffin and Paul R. Gregory-এর ভাষায়, “শ্রম হলো শারীরিক ও মানসিক প্রতিভা, যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানুষ নিয়োজিত করে।” (Labour is the physical and mental talent that human beings contribute to the production process.)
অধ্যাপক মার্শাল (Marshall) বলেন, “মানসিক বা শারীরিক যেকোনো প্রকার আংশিক অথবা সম্পূর্ণ পরিশ্রম যা আনন্দ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের উপকার সরাসরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাকে শ্রম বলে।” (Any exertion of mind or body undergone partly or wholly with view to some good other than the pleasure derived directly from the work, is called labour.)
শ্রমের সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ পাওয়া যায়-
১. শ্রম উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত হয়।
২. সাধারণ অর্থে শ্রম বলতে শুধু দৈহিক শক্তি বোঝায়।
৩. জীবজন্তুর পরিশ্রম উৎপাদনে নিয়োজিত থাকলেও অর্থাৎ উপযোগ সৃষ্টি করলেও তা শ্রম নয়।
৪. সাধারণত খেলাধুলা বা আমোদ-প্রমোদে অংশগ্রহণ করে যে পরিশ্রম করা হয় তা শ্রম নয়।
শ্রম বাজার
অর্থনীতিতে শ্রমবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। শ্রমবাজার নির্ভর করে শ্রমের চাহিদা ও যোগানের ওপর। অর্থাৎ শ্রমবাজারে শ্রমের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দাম তথা মজুরিতে শ্রম ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। মূলত শ্রমের চাহিদা নির্ভর করে শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার ওপর। শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হলে শ্রমের চাহিদা বেশি হয়। আবার শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা কম হলে শ্রমের চাহিদা কম হবে। আবার শ্রমের যোগান নির্ভর করে শ্রমের মজুরির ওপর। শ্রমের মজুরি বেশি হলে শ্রমের যোগান বেশি হয়। আবার শ্রমের মজুরি কম হলে শ্রমের যোগান কম হবে।
অতএব, শ্রমবাজার বলতে এরূপ একটি বাজার কাঠামোকে বোঝায় যেখানে শ্রমিকের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট মজুরিতে শ্রমিকের শ্রম ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, শ্রমিকের দক্ষতা নির্ধারণে উপরিউক্ত বিষয়সমূহ ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা একজন শ্রমিককে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরোপের একজন শ্রমিক তথাকথিত অনুন্নত একটি দেশের শ্রমিকের তুলনায় যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কাজ করে থাকে। তাই দক্ষতা অর্জনে শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকদেরও একটি বিশেষ ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে।
শ্রমের দক্ষতা
শ্রমের দক্ষতা দ্বারা একজন শ্রমিকের প্রকৃত কাজ করার সামর্থ্য সম্পর্কে জানা যায়। অর্থাৎ শ্রমিকের কাজ করার ক্ষমতা দ্বারা শ্রমের দক্ষতা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, যে শ্রমিক যত কাজ করতে পারে সে তত দক্ষ। “কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একজন শ্রমিক যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তাই শ্রমের দক্ষতা।”
অর্থনীতিবিদ মেহেতা (Mehta) বলেন, “শ্রমের দক্ষতা বলতে শ্রমিকের সামর্থ্যকে বোঝায়, যা থেকে শ্রমের উৎপাদনশীলতা তৈরি হয়।”
মনোপসনি বাজার কাকে বলে ও মনোপসনি বাজারের বৈশিষ্ট্য |
শ্রমের দক্ষতার সূত্র হলো-
শ্রমের দক্ষতা (EL) = উৎপাদনের পরিমাণ (Q)/কাজের সময় (WT)
এখানে,
EL = Efficiency of Labour.
Q = Quantity of Production.
WT = Work Time.
উন্নত দেশসমূহ যেমন- আমেরিকা, জাপান, চীন ইত্যাদি দেশের শ্রমিকরা আমাদের দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বেশি দক্ষ। অর্থাৎ, কাজের সময় (WT) একই থাকলেও উৎপাদনের পরিমাণ (Q) উন্নত দেশসমূহে বেশি দেখা যায়। ফলে শ্রমের দক্ষতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।